কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৮:৩৫

কমলগঞ্জে গলযোগ ছাড়াই শেষ হলো ভোটগ্রহণ

শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে একটানা ৪টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

কমলগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার ১৩ হাজার ৯০৫ জন ভোটারের মধ্যে বেসরকারি হিসেবে ১১ হাজার ৪২০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৯টি ভোটকেন্দ্রে ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পৌরসভার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক বর্তমান মেয়র মো: জুয়েল আহমদ, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হোসেন, নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা মো: আনোয়ার হোসেন ও জগ প্রতীক নিয়ে সাবেক সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো; হেলান মিয়া প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

সকালে ভোট গ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি ভালো ছিল। পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরে প্রার্থীদের সমর্থকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সকাল সাড়ে ৮টার পর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জুয়েল আগমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হেলাল মিয়া। সফাত আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আনোয়ার হোসেন। গোবর্ধ্বনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রির্টার্নিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার বিকেলে এ প্রতিনিধিকে জানান,  উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। কোনো কেন্দ্র থেকে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর কিংবা অভিযোগ আসেনি। তিনি আরো বলেন, কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করেন। ৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার টহল ছিল। তাছাড়া শক্ত ভিজিল্যান্স টিমও মাঠে রয়েছে।

কমলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে না মেনে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী দুজন মেয়র প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নারিকেল গাছ ও জগ প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী থাকায় ভোটের শুরুতে উত্তেজনা থাকলেও কোন বিশৃংখলা চেখে পড়েনি।

১৯৯৯ সালে কমলগঞ্জ পৌরসভা গঠনের পর থেকে এখানে ৩ বার নির্বাচন হয়েছে। এরমধ্যে একটি উপ-নির্বাচন। মেয়র পদে দুইবার জিতেছে বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রথম নির্বাচনে জেতেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান চাষী (চেরাগ মিয়া)। এক বছর পর তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে জয়ী হন বিএনপি নেতা হাসিন আফরোজ চৌধুরী। দ্বিতীয় নির্বাচনেও জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী আবু ইব্রাহিম জমশেদ। তৃতীয় নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ। তাকে এবারও আওয়ামীলীগ মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। আরও দুইজন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে পৌর নিবার্চনকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জে আওয়ামী লীগ ত্রি-খন্ডে বিভক্ত হওয়ার কারণে স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন আরও দুইজন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী জুয়েল আহমেদ (নৌকা) প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেওয়া দুই বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জুয়েল আহমেদের বিজয় নিশ্চিত করতে গত ১০ দিন ধরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের ৮ জন নেতা কমলগঞ্জে অবস্থান করছেন।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিসবাউর রহমানের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কমলগঞ্জ পৌসভায় নিয়মিত গণসংযোগ শেষে গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ শোডাউন করে সর্বশেষ পথ সভা করেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (নারিকেল গাছ) ও মো. হেলাল মিয়া (জগ) মাঠে অবস্থানে ছিলেন। তারা দুজনই জয় লাভে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত