জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:৫০

নাব্যতা হারিয়ে ভাঙ্গারখালে জেগেছে চর

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা যৌবনবতী ভাঙ্গারখাল নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় নদীটির বুকে চর জেগেছে। অথচ এক সময় এ নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী ও বিভিন্ন মালামাল নিয়ে চলাচল করত। কিন্তু গত দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে একবারেই বন্ধ রয়েছে। নৌ-যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক দিয়ে পায়ে হেঁটেই চলাচল করছে স্থানীয় এলাকাবাসী। ভরাট হওয়া সেই অংশে এখন ধানের চাষও করেছে স্থানীয় লোকজন। ফলে নাব্যতা হারিয়ে এই নদী এখন শুধুই ইতিহাস।
জানাযায়,উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি ভাঙ্গারখাল। এই নদীটি উত্তর বড়দল ইউনিয়নকে আলাদা করেছে বাদাঘাট ইউনিয়ন থেকে। এই নদী দিয়ে দক্ষিণ দিকে তাহিরপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হত। তবে বর্তমানে শুধু বর্ষায় সময় নৌকা চলাচল করলেও শুষ্ক মৌসুমে একবারেই বন্ধ।

বিজ্ঞাপন

আর উত্তর দিকে এই নদীটি প্রবাহিত হয়ে যাদুকাটা নদীতে মিলিত হত। কিন্তু কালের আবর্তে এই নদীর প্রবাহের দিক ভরাট হয়েছে আর কিছু মানুষ নিজেরাই ভরাট করে নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। যাদুকাটা নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাসহ জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ সহজ ছিল। কিন্তু কালের আর্বতে এই নদী মুখ(বর্তমানে শিমুল বাগান সংলগ্ন)এখন পলি পরে নদীর বুক বরাট হয়ে যাওয়ায় নদী খনন না করায় শুষ্ক আর বর্ষা মৌসুমে হউক নৌযান চলাচল একবারেই বন্ধ। ফলে নদী পথে কম খরচে উপজেলার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বাদাঘাট বাজারে ভৈরব,কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের মালামাল এখানকার ব্যবসায়ীরা আনতে চাইলে নদী পথে আনা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে সড়ক পথে মালামাল আনার কারণে খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রমজান মিয়া জানান,নদী খনন না করায় নদীটি মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই নদীর ভুকে চড় জাগায় ধানের জমি ও বিভিন্ন ফসল চাষ করছে। নদীটি খনন করলে সবাই উপকৃত হবে। না হলে এই নদীর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না একদিন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা থেকে যাদুকাটা নদী হয়ে এক সময় এই নদী পথে বাদাঘাট বাজারে আসা সোহেল আহমদ সাজু জানান, ছোট বেলায় আমি আমার বাবার সাথে ছোট নৌকা দিয়ে বাদাঘাট বাজারে আসতে হলে সড়ক পথের কোন ব্যবস্থা না থাকায় নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। ফলে নৌকা দিয়ে যাদুকাটা নদী দিয়ে বর্তমান শিমুল বাগানের সামনে দিয়ে বাদাঘাট বাজারে আসতাম। এখন এই নদী পথ একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।

সমাজ সেবক ও বাদাঘাট বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুক মিয়া জানান,এই নদী পূর্বে নদী পথের নৌযান চলাচল জমজমাট ছিল। খরচের পরিমাণ ছিল কম। কিন্তু সড়ক পথে খরচের পরিমাণ অনেক বেশী। কিন্তু দিন দিন নদী ভরাট হওয়ায় কারণে নদীর বুকে চড় জেগেছে। ফলে বাদাঘাট বাজারসহ অন্যান্য বাজারের ব্যবসায়ীরা নৌ-পথে কোন ধরনের মালামাল পরিবহন করতে পারছে না। নদী খনন করা খুবেই প্রয়োজন।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় খনন করা খুবেই প্রয়োজন। খনন করা না হলে নৌ পথের সুফল ভোগ করতে পারবে না ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ। আমি ও উপজেলা পরিষদের পক্ষে থেকে এই বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত