নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০২:০৩

জাফলংয়ে নদীতে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা, টাস্কফোর্সের অভিযানের অপসারণ

পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত জাফলংয়ের ডাউকি নদের একাংশে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছিল। রাতের বেলা কাজটি করার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে সেই বাঁধ রাতেই অপসারণ করে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে সোমবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ অভিযান হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ‘মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন’। জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা আজ মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি, কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে রাতের বেলা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন গত বছরের ১৭ আগস্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশনার একটি চিঠির মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনকে জাফলংয়ের চৈলাখেল (তৃতীয় খণ্ড) মৌজার ৬ দশমিক ৫৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা ভূমি বলে জানিয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, চুনাপাথর উত্তোলনের জন্য ১৯৭২ সালের ১১ অক্টোবর ওই ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৭৮ দশমিক ২৭ একর ভূমি ‘মাইনিং লিজ’ নেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ৪ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের ভূমিসংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই বন্দোবস্ত বাতিল করে। পরে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে সম্প্রতি ভূমির ভোগদখল বজায় রাখার আদেশ হয়।

মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের দুই ব্যবসায়ী তখন অভিযানে থাকা লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। এ অবস্থায় ১৮৯ ধারায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফছার উদ্দিনকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।


উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাফলংকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা হয় ২০১২ সালে। সেই প্রজ্ঞাপন জারি হয় ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে বালু ও পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা বন্দোবস্ত কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। বালু ও পাথর উত্তোলনও বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির উন্নয়নে জাফলংয়ে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডাউকি নদ থেকে আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১১টি মৌজা নিয়ে মোট ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইসিএ। ঘোষিত এলাকার মধ্যে জাফলংয়ের ডাউকি নদ এবং এ নদের উভয় পার থেকে ৫০০ মিটার প্রস্থের এলাকাসহ বল্লাঘাটের বিপরীত দিকে পিয়াইন নদ পর্যন্ত বিস্তৃত পুরো খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে।

টাস্কফোর্স সূত্র জানায়, ডাউকি নদের একাংশে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করার খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স অভিযান চালায়। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন বালু উত্তোলন বন্ধ না করে উল্টো সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করে হুমকিও দেন। এ সময় বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত একটি পেলোডার মেশিন জব্দ ও প্রতিষ্ঠানের দুই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে জব্দ পেলোডার এবং আটক দুই ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযানে গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হোসেন, বিজিবির তামাবিল ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার জয়নাল আবেদিনসহ পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ছিলেন।

ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, ইসিএভুক্ত এলাকায় ইসিএ–বিরোধী যেকোনো কাজ করা আইনত অপরাধ। নদে বাঁধ দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে রাতের বেলা তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হয়। মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের দুই ব্যবসায়ী তখন অভিযানে থাকা লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। এ অবস্থায় ১৮৯ ধারায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফছার উদ্দিনকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। নদের গতিপথ রোধ করায় তাঁদের জরিমানা করা

সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও জরিমানা সম্পর্কে জানতে চাইলে জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফছার উদ্দিন দাবি করেন, তারা নদে কোনো রকম বাঁধ বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেননি। উচ্চ আদালত নির্দেশিত তাদের অধিগ্রহণ করা ভূমি থেকে নদের পানি সরাতে পাইপ স্থাপন করছিলেন। এ কাজ ইসিএভুক্ত এলাকার বাইরে হচ্ছিল। তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে রাতের বেলা পরিচালিত এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত