জগন্নাখপুর প্রতিনিধি

০২ মার্চ, ২০২১ ২১:৩০

কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতু ধসের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি

সুনামগঞ্জের পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কোন্দানালা সেতু ধসে পড়ার ঘটনায় মঙ্গলবার দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর একটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন। এই তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অপর দিকে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ডিজাইন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু ও ডিজাইন) শিশির কান্তি রাওকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির অপর দুজন হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান কাওছার।

সওজ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতু ধসে পড়ার ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে আজ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত কিছু এখনো জানি না। অপর দিকে সেতু ও ডিজাইন বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ধসে পড়া গার্ডার সরিয়ে কাজ শুরু করতে বলেছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হবে।’

মন্ত্রণালয়ের সেতু ও ডিজাইন বিভাগের তদন্ত কমিটির সদস্য নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, ধসে যাওয়া সেতু আজ পরিদর্শন করেছেন তারা। তদন্ত প্রতিবেদন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হবে বলে আশা করছেন। এর আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয় বলে জানান তিনি।

এদিকে নির্মাণকাজ শেষের আগে সেতু ধসে যাওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

এলাকাবাসি জানান, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে জগন্নাথপুর তথা সুনামগঞ্জের দুরত্ব কমাতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ডাবর পয়েন্ট থেকে পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক হচ্ছে। এই সড়কের প্রশস্তকরণ দেড় বছর পূর্বে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাবর পয়েন্ট থেকে জগন্নাথপুর পর্যন্ত ড্রেনেজসহ ২২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ডাবর থেকে জগন্নাথপুর অংশে পুরাতন সেতুগুলো ভেঙে ৭ টি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ৬ মাস আগে থেকেই। সাতটি সেতু নির্মাণকাজে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ করছে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এ- ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। গত রোরবার রাতে ওই সড়কের ছাতক অংশের কুন্দানালা খালের উপর প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট ১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট ২৫ মিটার প্রস্তের সেতু নির্মাণাধীন সেতুটি ধসে পড়ে। অভিযোগ ওঠে নিন্মমানের কাজের জন্য সেতুটি ভেঙে পড়েছে। তবে টিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি গার্ডার বসানোর সময় হাইড্রোলিক জ্যাক বিকল হাওয়ায় সেতুটি ধসে গেছে।

ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে এখন শঙ্কায় পড়েছেন উপজেলাবাসী। এই প্রতিষ্ঠান জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জের কুশিয়ারা নদী ওপর দীর্ঘতম একটি সেতু প্রায় দেড়শত কোটি টাকা ব্যয় নির্মাণকাজ করছে। এছাড়া সড়কে আরো সাতটি সেতুর কাজ করছে ওই প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে একটি সেতু উদ্বোধনের আগেই ভেঙে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের কাজের মান নিয়ে এখন সন্দেহের চোখে দেখছেন স্থানীয়রা।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা বলেন, নির্মাণকালে সেতু ধসে পড়ায় টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে এখন মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভ আর সন্দেহে বিরাজ করছি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিষয়টি নিস্পত্তির প্রয়োজন। এবং কাজের মানের দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত