নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ মার্চ, ২০২১ ১৩:০৩

গোয়াইনঘাটে টিলা কাটছেন আওয়ামী লীগ নেতা

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে টিলা কাটার অভিযোগ ওঠেছে। টিলা কাটার ঘটনাটি ঘটছে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রামনগর এলাকায়। অভিযুক্ত গোলাপ মিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

সিলেটে টিলা কাটায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই সিলেট নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলে টিলা কাটা। টিলা কাটারক্ষেত্রে সবসময়ই প্রশাসন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সংশ্লিস্টতার অভিযোগ ওঠে। এবার ফতেহপুরে টিলা কাটার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা।

গোয়াইনঘাট উপজেলাজুড়েই রয়েছে বন আর টিলাভূমি। তবে এই দুই শ্রেণীর ভূমিই দেদারছে নষ্ট করা হচ্ছে। বন দখল করে, টিলা কেটে সাবাড় করে নিচ্ছে দখলদাররা।

সিলেটের পাহাড় টিলা কাটা নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশে জরুরী জাতীয় প্রয়োজনে সংশ্লিস্টদের অনুমতি সাপেক্ষে টিলা কাটা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ফতেহপুরের টিলা কাটার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কারোরই অনুমতি নেওয়া হয়নি।

ফতেহপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ও টিলার মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, যে টিলাটি কাটা হচ্ছে তা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাপ মিয়ার ব্যক্তি মালিকানাধীন। তিনি নিজেই টিলাটি কাটাচ্ছেন।

এর আগেও সিলেট সদর উপজেলায় ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দখল করে সিএনজি পাম্প নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছিলো গোলাপ মিয়ার বিরুদ্ধে।

গত মঙ্গলবার (২ মার্চ) সরেজমিন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন ফতেহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রামনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পে-লোডার ও এসকেভেটর দিয়ে দিয়ে টিলা কাটা চলছে। ট্রাক ভর্তি করে টিলার মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। ইতিমধ্যেই ৮০ শতাংশ টিলা কাটা হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাপ মিয়া গত তিনদিন ধরে এখানের টিলা কেটে অন্যত্র মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। গোলাপ মিয়া ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় ও টিলাটি তার মালিকানাধীন হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

তবে এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান। তিনি বলেন, টিলা কাটা হচ্ছে এমন কোনো খবর আমার জানা নেই, আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আর এ ব্যাপারে জানতে গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাপ মিয়ার মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের মোহাম্মদ এমরান হোসেন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, টিলা কাটার ব্যাপারে অবগত নই। তবে আমরা আজই খবর নিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে টিলা কাটার প্রমাণ পাওয়া গেলে যিনি টিলা কাটছেন আমরা তার নামে নোটিশ জারির মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কারণ তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টিলা কাটতে পারেন না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

প্রসঙ্গত, পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা) এর একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১ মার্চ এই অঞ্চলে পাহাড় টিলা কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত