নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ মার্চ, ২০২১ ১৭:৩৫

বন্ধ থাকা সিলেটের সরকারি তেল শোধনাগারগুলো দ্রুত চালুর আশ্বাস

সঙ্কট নিরসনে সিলেটে নদী পথে আসবে তেল

বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে না পারার অজুহাতে সাড়ে পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সরকারি জ্বালানি তেল শোধনাগারগুলো। সরকারি শোধনাগার বন্ধ রেখে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গ্যসের উপজাত (কনডেনসেট) থেকে জ্বালানি তেল উৎপদন করা হচ্ছে। এতে বড় অংকের লোকসান গুণছে সরকার।

তবে বন্ধ থাকা সরকারি শোধনাগারগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক। বুধবার সিলেটের জ্বালানী পরস্থিতি নিয়ে সংশ্লিস্টদের সাথে মতবিনিময়কালে এমনটি জানান বিপিসি চেয়ারম্যান।

এছাড়া রেলের ওয়াগন সঙ্কটে সৃষ্ট জ্বালানী সঙ্কট মোকাবেলায় সিলেটে রেলওয়ের পাশপাশি নদীপথেও জ্বালানী তেল পরিবহন করা হবে বলে জানান তিনি।

পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্ট এবং পেট্রোলপাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জানা যায়, গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের সাথে পাওয়া যায় এনজিএল ও কনডেনসেট। এই কনডেনসেট শোধনাগারে রুপান্তরের মাধ্যমে তৈরি হয় পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেন। আর এনজিএল থেকে তৈরি হয় এলপিজি।

উপজাতকে জ্বালানি তেলে রুপান্তরের জন্য সিলেটের গেলাপগঞ্জে রুপান্তিরত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিডেট (আরপিজিসিএল) এর ৮০০ ব্যারেল ও ৫০০ ব্যারল পেট্রোল, ডিজেল ও এলপিজি রুপান্তর ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ফ্রাকশনেশন প্লান্ট, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিডেটের অধীনে হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাশটিলায় ৩০০ ব্যারেল রুপান্তর ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি এবং রশিদপুরে ৩৭৫০ ব্যারেল ও ৪০০০ ব্যারেল রুপান্তর ক্ষমতা সম্পন্ন আরও দুটি প্লান্ট রয়েছে। তবে গত ১ অক্টোবর থেকে সরকারি মালিকানাধীন এই সবগুলো পরিশোধনাগার বন্ধ রয়েছে।

এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তিনটি বেসরকারি শোধনাগারে জ্বালানি তেল রূপান্তর করা হচ্ছে।  

আগে সিলেটের জ্বালানী তেলের চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ হতো এখানকার শোধনাগারগুলো থেকে। তবে সরকারি শোধনাগারগুলো বন্ধ হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে রেলওয়ের ওয়াগনের মাধ্যমে তেল আনা হয় সিলেটে। ওয়াগন সঙ্কট ও তেলবাহী ট্রেনের ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে ব্যাহত হয় তেল পরিবহন। এতে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে জ্বালানী তেলের তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়।

তেল সঙ্কট দূর ও সিলেটের শোধনাগারগুলো চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন সিলেটের পেট্রোল পাম্প ব্যবসায়ীরা। দ্রুত দাবি পুরণ না হলে ধর্মঘটে যাওয়ারও হুমকি দেন তারা। এ অবস্থায় জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী, প্রশাসনসহ সংশ্লিস্টদের নিয়ে বুধবার দুপুরে সিলেটে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম।

এসময় বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, সিলেটে কয়েকবার রেলওয়ের তেলবাহী ওয়াগন দুর্ঘটনায় পড়ার পাশাপাশি সিলেটের গ্যাস ফিল্ড থেকে তেল উৎপাদন বন্ধ থাকায় চাহিদা মোতাবেক তেল সরবারাহ করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই সমস্যা আর থাকবে না। সড়ক পথের পাশাপাশি এবার নদীপথেও সিলেটে তেল সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এই কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সিলেটের শোধনাগারগুলো থেকে পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন হচ্ছে না। আমরা সব  সমস্যা সমাধান করে আগামী ১/২ মাসের মধ্যে এগুলোতে তেল উৎপাদন শুরু করব। এরপর আশা করছি সিলেটে তেলের কোন সংকট থাকবে না।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মানমাত্রা অনুযায়ী সেই জ্বালানিই অকটেন হিসেবে গণ্য হবে, যাতে অন্তত ৯৫ শতাংশ অকটেন অণুকণা থাকবে। আর পেট্রলে অকটেন অণুকণা থাকতে হবে অন্তত ৮৫ শতাংশ। তবে দেশের সরকারি শোধনাগারগুলো থেকে সরবরাহকৃত জ¦ালানি তেলে এই মান রক্ষা করা সম্ভব হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের বাজারে সরবরাহ করা অকটেনে ৯০ শতাংশের কম এবং পেট্রোলে ৮০ শতাংশের কম অকটেন অণুকণা রয়েছে।  আর ডিজেলে বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত সালফারের মাত্রা ৫০০ পিপিএম। কিন্তু দেশে যে সামান্য পরিমান ডিজেল তৈরি হয় তাতে সালফার থাকে বিএসটিআইয়ের মানমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। এনিয়ে অভিযোগি ওঠার পর  বন্ধ হয়ে যায় সরকারি পরিশোধনাগারগুলোতে উৎপাদন।

সিলেট পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্ট এবং পেট্রোলপাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের বিভাগীয় সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, বিপিসি চেয়ারম্যান সকল সমস্যা সমাধান করে সিলেটের শোধনাগারগুলো থেকে  ১/২ মাসের মধ্যে আবারও তেল উৎপাদন শুরু করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সিলেটে সড়ক পথের পাশাপাশি এবার নদীপথেও তেল আসবে। তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে। নদীপথে শেরপুরে তেল আসার পর সেগুলো সড়ক পথে সিলেটে আসবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সিলেটে তেলের সঙ্কট আর থাকবে না।

এই সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের চার জেলায় ১১৪টি পেট্রল পাম্প ও সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় মোট ৭০টি পাম্প রয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমে সিলেটের পাম্পগুলোতে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। তবে বর্ষ মৌসুমে এই চাহিদা অর্ধেকে নেমে আসে। গত দুই মাস ধরে চাহিদার অর্ধেক তেলও পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত