নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:৪৩

সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্তা: দুই পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার, আ.লীগ নেতা বহিষ্কার

বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা

হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে পুলিশের সামনে হেনস্তার ঘটনায় ধর্মপাশা থানার দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদেরকে থানা থেকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্থা করার বিষয়টি ফেসবুককে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আজ বুধবার বিকালে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় ওই নেতাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরআগে ওই শিক্ষার্থীদের হয়রানীর দায়ে মঙ্গলবার রাতেই ধর্মপাশা থানার অভিযুক্ত থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিছ বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটিতে পাঠানো হবে। আলম অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। এই ঘটনার জন্য জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ দায়ী। আলমের উপস্থিতিতে তার ছেলে আল মুজাহিদের নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে। শুনেছি পুলিশ তাকে হাতকড়া পড়িয়েছিল। তবে থানার ওসিকে বলার পরপরই হাতকড়া খোলা হয়েছে। ’

প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে হেনস্তার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আফজাল খান (২৪)। আফজাল খানের বাড়ি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল গত ২৯ মার্চ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি পোস্টটি শুধু নিজে দেখতে পাওয়ার মতো ’অনলি মি’ করে রাখনে। তবে স্থানীয় কিছু যুবক আফজাল খানের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন। ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় ওই ছাত্রলীগ নেতা নিজের গ্রাম মহেশপুর থেকে জয়শ্রী বাজারে যান। এসময় স্থানীয় জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের ছেলে আল মুজাহিদ (২৫) বেশ কিছু মানুষকে নিয়ে আফজাল খানের কাছে ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে ব্যাখা জানতে চান। তখন শিক্ষার্থী আফজাল তখন উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘তিনি ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কোনো পোস্ট দেননি। তবে হেফাজতের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিবাদে একটি পোস্ট দিয়েছেন।’

এরপর এনিয়ে শিক্ষার্থী আফজাল ও মুজাহিদের মধ্যে হঠাৎ করে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে মুজাহিদ ছাত্রলীগ নেতা আফজালের উপর চড়াও হয়। সে সময় আফজালের কয়েকজন বন্ধু ও স্থানীয় লোকজন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুজাহিদের পক্ষের লোকজন শিক্ষার্থী আফজালকে জয়শ্রী বাজারে থাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আটক করে রাখেন। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে তখন কয়েক শতাধিক মানুষ অবস্থান নেয়।

খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তারা ছাত্রলীগ নেতা আফজালের বিপক্ষে জড়ো হওয়া উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর সেখানে উপস্থিত হন ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

অভিযোগ বিষয়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ বলেন, ‘হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। ছাত্রলীগ নেতা তখন ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। হেফাজত ইসলামকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ও ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করায় পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রেখেছিল। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি।’

তবে ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানের দাবি, ‘ধর্মপাশা থানার ওসির নির্দেশে তাকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং উপস্থিত লোকজনের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিচয় পেয়ে মাঝপথেই পুলিশ হাতকড়া খুলে দেয়। থানায় বসে তিনি রাতে পুলিশ সুপারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এরপর  ঘটনার বিবরণ সাদা কাগজে লিখে তাতে সই রেখে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের হয়রানী করার ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে অবগত করার পরপরই মঙ্গলবার রাতেই ধর্মপাশা থানার অভিযুক্ত থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এসআই জহিরুল ইসলামের দাবি করেছেন, তিনি ও এএসআই আনোয়ার ছাত্রলীগ নেতার হাতে হাতকড়া পড়াননি। ওসি’র নির্দেশে সিভিল পোশাকে থাকা একজন এএসআই হাতকড়া পড়িয়েছিল।’

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ওই ছাত্রলীগ নেতাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টির তদন্ত করে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত