নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ এপ্রিল, ২০২১ ০১:১৪

সিলেটে উৎসব আমেজে বোরো ধান কাটা শুরু

জমিতে পাকা ধানের ছড়া বাতাসে নুয়ে পড়েছে। সাতসকালে হাতে কাস্তে আর মাথায় গামছা বেঁধে ধান কাটতে জমিতে নেমে পড়েছেন সিলেট সদর উপজেলার সামাউরাকান্দি হাওরের কৃষক সবুর আলী। তার সঙ্গে আছেন দুই ছেলে শামিম আর মহসিন। সামাউরাকান্দি হাওরে সবুর আলী প্রায় সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে চাষ করছেন বোরো ধান। খরায় কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার ধান অনেক ভাল হয়েছে তাই দুই ছেলে নিয়ে হাওরে গেছেন ধান কাটতে।

সামাউরাকান্দি হাওরের মত সিলেটের বাওরকান্দি, বাদাঘাট, নীলগ্রাম, বাইশটিলা এলাকার প্রায় ৬০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ধানের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে হাওরের চারদিকে। কোনো কোনো হাওরে আবার কেবল ধান পাকতে শুরু করেছে। দিন চারেকের মধ্যে ধান কাটার উপযোগী হবে। যারা আগে ধান রোপণ করেছিলেন তারা ইতোমধ্যে সবুর আলীর মত ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। বলা যায় অনেকটা উৎসব আমেজে ধান কাটছেন কৃষকরা।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সিলেটের সামাউরাকান্দি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৬০ শতাংশ বোরো ধান পেকে গেছে। সেখান ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন কৃষকরা।  

বাওরকান্দি হাওরের কৃষক জিল্লুর মিয়া বলেন, ধান কাটা শুরু করেছি দুদিন হল। ফলন ভালেই হইছে। পোকার কোনো উপদ্রব ছিল না এবার। মাঝে কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে খরায় যে ক্ষতি হয়েছিল সেটা পুষিয়ে গেছে। এই এলাকার বেশিরভাগ কৃষকই ধান কাটতে শুরু করেছেন। যারা দেড়িতে ধান রোপণ করেছিলেন তাদের ধান কাটতে আরও সপ্তাহ খানেক লাগবে।

একই এলাকার আরেক কৃষক ইকরাম আলী বলেন, বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আমার জমির ধান এখনো পুরুদমে পাকেনি। দু-চার দিনের মধ্যে পেকে যাবে। তখন কাটবো। আমার ছেলে সন্তান বিদেশ তাই সাত আটজন দিনমজুর বলে রেখেছি। গতবছরও আগাম বন্যা হয়নি। এবছরও এখন পর্যন্ত আগাম বন্যার সম্ভাবনা নাই। তাই ফসলহানীর সম্ভাবনা অনেক কম।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মাঝেও এবার সিলেট সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মাঠে ছিলেন। বিভিন্ন সময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। সহযোগিতা করেছেন বলে জানান। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ঈদের আগেই ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে বলে জানান সিলেট সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

সিলেট সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার সিলেট সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৬০ হেক্টর জমি পড়েছে হাওড় এলাকায়।  

এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার রাকিবুল হাসান বলেন, এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তবে খরায় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ফসলে পোকা মাকড়ের কোনো উপদ্রব নেই সিলেটে। ইতোমধ্যে ধানা কাটা শুরু হয়েছে। উৎসব আমেজে ধান কাটছেন কৃষকরা। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ৩১ মে এর মধ্যে সব ধান কাটতে পারবেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট জেলা সূত্র  জানায়, এবার সিলেট জেলায় ৮১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ৩ লাখ ১২ হাজার  মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট জেলার উপ-পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, বোরো ধান কাটা মাত্র  শুরু হয়েছে । বাহ্যিক দিক থেকে মনে হচ্ছে এবার  ধানের  ফলন  ভালোই হয়েছে। আমরা আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো। ঈদের আগেই বেশিরভাগ ধান কেটে ঘরে তোলতে পারবেন কৃষকরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত