জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

১৫ এপ্রিল, ২০২১ ২০:০০

বৈশাখে কদর বাড়ে বাঁশের তৈরি পণ্যের

সারা বছর কৃষিপণ্য তৈরির কারিগরগণ অলস সময় কাটালেও বৈশাখ মাস এলেই বাঁশ ও বেত শিল্প ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত অন্য সব ধরণের পণ্যেরও কদর বেড়ে যায়। এই সময়টাতে ব্যবসায়ীদের পণ্য সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হয় কারিগরদের। হাওরাঞ্চলে পুরুদমে বোরো ধান কাটা শুরুর পথে তাই বাঁশ দিয়ে তৈরি টোকরি, উড়া, কুলা, কাদি, ডুল, জাকি, চালনি ক্রেতাদের যেমন চাহিদা বাড়ছে তেমনি বিক্রেতা ও কারিগরদের ঐসব কৃষিপণ্য তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। এই সময়ে আর্থিক ভাবে বেশি লাভবান হন তারা।

সুনামগঞ্জে হাওরাঞ্চলে এক সময় প্রতিটি পরিবারে বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা ছিল। ছিল এর সাথে জড়িত মালিক, শ্রমিক, কারিগরদের ব্যস্ততা। কিন্তু দিন দিন এর স্থান দখলে নিচ্ছে প্লাস্টিক পণ্য। একদিকে বাঁশ ও বেতের উৎপাদন কমে যাওয়া ও দামবেশী অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক শিল্পের প্রসারের কারণেই বাঁশ, বেত শিল্প এখন হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এ পেশে ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার বাজার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৈশাখ মাসে ক্রেতাদের সমাগমে যেন মেলায় পরিণত হয়ে উঠে বাজারগুলো। অথচ সারা বছর এই বাজারগুলো এসব পণ্যের তেমন কদর থাকে না। বাজারে কৃষি পণ্যের হাটগুলোতে বিশাল আয়োজন থাকলেও কৃষিকাজ ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করতে বিক্রেতাগন হিমশিম খাচ্ছেন এখন।

তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে-ধান-চাল নেয়ার সব চেয়ে সুবিধাজনক পণ্য বাঁশের ঝুড়ি। (যেটি স্থানীয়রা টোকরি, উড়া, ডুল বলে)। এছাড়াও ধান শুকানোর চাঁচ, কাগজের পাল, ধান রাখার ক্ষুত্র গোলা (ঢোল), ধান কাটার কাচি ইত্যাদি।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ অনেক বিক্রেতা তুলনামূলকভাবে এসব পণ্যগুলোর দাম বেশি নেয়ার। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, সারাবছর চাহিদা কম থাকায় এসব পণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত অনেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের(ব্যবসায়ীদের)।

এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজারে সোহেল মিয়া বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দাম বাজারে। কিন্তু কিছুই করার নেই। মাঠের ধান ঘরে তুলার জন্য এসব পণ্যের তুলনাই নেই। তাই বেশি দামেই নিতে হচ্ছে। সব কিছুতেই এখন ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করেন। বৈশাখ মাসকে ঘিরে কৃষি পণ্যের ব্যবসায়ীরাও তাই করেছেন। সব ধরণের পণ্যের গলাকাটা দাম নিচ্ছেন তারা।

শক্তিয়ালখলা গ্রামের কৃষক কামাল মিয়া বলেন, বৈশাখ মাসে ধান ঘরে তুলার জন্য বাঁশের জিনিসগুলো খুবই উপকারী। তাছাড়া প্লাস্টিক তৈরি এইসব পণ্য পাওয়া যাবে না। তাই এসব কিনতে এসেছি বাজারে। তবে দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশী।

তবে আমিনুল, সাকিবুরসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী বলছেন, এসব পণ্য উৎপাদন করতে এখন বাঁশ ও বেতের দাম এখন অনেক বেশি আর তৈরিতে খরচও হচ্ছে বেশী। আবার পাওয়া যায় একবারেই কম। পূর্বে একজন শ্রমিকে দৈনিক ২ থেকে ৩শত টাকা মজুরী দিতে হত। এখন ৫ থেকে ৬শত টাকা দিতে হয়। তাও পাওয়া যায় না। আর সরকার আমাদেরকে কোনো ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে না।

ব্যবসায়ীরা জানান, যারা ঐসব পণ্য তৈরি করে (উৎপাদনকারী) তাদের কাছ থেকেই আমাদের চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে একটু বেশি দামে। না হলে লাভ হবে না। তাছাড়া সরকারিভাবে বাঁশ ও বেত উৎপাদনে ও এর সাথে জড়িত শিল্পদের ঠিকিয়ে রাখতে সরকারে কোন উদ্যোগ না থাকার ফলে এই শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে। যারা ঠিকে আছে তারা আছেন নানান কষ্টের মাঝে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত