নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ মে, ২০২১ ১৫:২৯

চার্জশিট নিয়ে যা বললেন রায়হানের মা সালমা বেগম

রায়হান আহমদের মৃত্যুর পর থেকেই একে হত্যাকান্ড হিসেবে দাবি করে আসছে তার পরিবার। পুলিশের নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করে এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামেন রায়হানের মা সালমা বেগম। তার এই আন্দোলন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো সিলেটে।

রায়হানের মৃত্যুর প্রায় সাত মাস এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে ৫ পুলিশ সদস্যসহ ৬ জনকে।

বুধবার সকালে জমা দেওয়া এই অভিযোগপত্র নিয়ে দুপুরে কথা হয় রাহয়ান আহমদের মা সালমা বেগমের সাথে।

অভিযোগপত্র নিয়ে তিনি বলেন, পিবিআই একটি দীর্ঘ অভিযোগপত্র দিয়েছে। এটি পুরোটা এখনও আমি পড়তে পারিনি। এছাড়া আমি একজন সাধারণ গৃহিনী। আইনী সব বিষয় বুঝিও না। এই অভিযোগপত্র নিয়ে আমার আইনজীবীদের সাথে কথা বলবো। তাদের পরামর্শ মতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।


অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর বুধবার দুপুরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান বলেন, তদন্তে রায়হানকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু এই নির্যাতনের সাথে কোনো পূর্ব বিরোধের সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, দীর্ঘ তদন্ত, সবার সাক্ষ্যগ্রহণ এবং রায়হান, আকবরসহ সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোন আলাপ সংগ্রহ করেও আমরা এরকম কোনো প্রমাণ পাইনি। রায়হানকে নির্যাতনের সাথে পূর্ব বিরোধের কিছু পাওয়া যায় নি।

যদিও রায়হানের মা সালমা বেগম প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, অন্য কারো ইন্ধনে পূর্ব পরিকল্পনার জেরে রায়হানকে তুলে এনে নির্যাতন করেছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে বুধবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালমা বেগম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, পূর্ব বিরোধ না থাকলেও আমার ছেলেকে ধরে নির্যাতন করার অধিকার কারো নাই। সে অন্যায় করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ মারধর করবে কেনো?

সালমা বেগম বলেন, রায়হানকে রাত ১টার দিাকে তুলে নেয়। সকাল ৭টার দিকে সে মারা যায়। এই ৬ ঘন্টা ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে তাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই। এখানে পূর্ববিরোধ বা তাৎক্ষণিক বিরোধ মূখ্য বিষয় নয়।

রায়হানের মা বলেন, রায়হান অপরাধ করেে থাকলে তাকে ধরার পর পুলিশ আমাদের অবহিত করবে। কিন্তু তা না করে শেষরাতে টাকা চেয়ে ফোন করানো হলো। আর রায়হানের মৃত্যুর পর নিজেদের এক দালালের মাধ্যমে আমাদের কাছে খবর পাঠায় পুলিশ। এসব কেনো করা হলো?

সালমা বেগম বলেন, ইয়াবা-ছিনতাইসহ এখন নানা বিষয়কে রায়হানের সাথে জড়ানো হচ্ছে। রায়হান যেহেতু নেই তাই এমন বিষয়ের সত্যমিথ্যা যাছাই করা সম্ভব নয়। এখন তো সে আর এসবের প্রতিবাদ করতে পারবে না। ফলে আমাদের দাবি একটাই, রায়হান হত্যার বিচার চাই।

প্রসঙ্গত, নগরের আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। কাষ্টঘর সুইপার কলোনি থেকে তাকে ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যান এই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ও তার সহকারীরা। এরপর কয়েক ঘণ্টা চলে নির্যাতন। শেষ রাতে এক পুলিশ সদস্যের মোবাইল থেকে নিজের চাচাকে ফোন করে রায়হান। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে দ্রুত ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে আসার জন্য চাচাকে অনুরোধ করে। ভোরের ফজরের নামাজের পূর্ব মূহূর্তে টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে হাজির হন চাচা। তবে তখন তাকে রায়হানের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এরপর ১১ অক্টোবর সকালে আবার চাচা ফাঁড়িতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অসুস্থ হয়ে পড়ায় রায়হানকে ওসমানী হাসপাতপালে পাঠানো হয়েছে। পরে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে রায়হানের মরদেহ দেখতে পায় পরিবার।

১১ অক্টাবর রাতেই হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। রায়হান হত্যার বিচার দাবিতে সিলেটজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। অবশেষে প্রায় সাত মাস পর চাঞহল্যকর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করা হলো।

ঘটনার প্রায় সাত মাস পর বুধবার এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করে পিবিআই।

অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্জ পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে  প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অন্য অভিযুক্তরা হলেন, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) আশেকে এলাহি, হাসান উদ্দিন, পুলিশের কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস এবং কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। নোমানের বিরুদ্ধে এসআই আকবরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা ও রায়হানকে নির্যাতনের আলামত ধংসের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত