শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

১৭ জুন, ২০২১ ২০:১৯

সবুজ গাছে ঘেরা শ্রীমঙ্গলের গৃহহীনদের আশ্রয়ণ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২য় ধাপে আরও ৩০০টি ঘরের পাশে গাছ লাগিয়ে দিচ্ছেন সরকারি বেসরকারি কার্যালয় ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই উপজেলায় আরও ৩০০ গৃহহীন অসহায় মানুষ পাচ্ছেন নতুন ঘর। ২য় ধাপে এরই মধ্যে নির্মিত হয়েছে ১৬০টি নতুন ঘর। আগামী ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে সুবিধা ভোগীর কাছে ঘরগুলো তুলে দিবেন। এর আগে এই উপজেলায় ৩০০ মানুষকে মুজিব বর্ষে নতুন ঘর তুলে দেওয়া হয়েছিলো।

মঙ্গলবার দুপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের উপরের খালি জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১৬০টি ঘর। প্রতিটি ঘরের চালের রঙ লাল, জানালাগুলো সবুজ, দেয়ালের রঙ সাদা। এই জায়গার অন্যপাশে আরও ১৪০টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। ঘরগুলোর পাশে নির্মিত করা হচ্ছে একটি স্কুল ঘর, একটি মসজিদ ও একটি মন্দির। এই ঘরগুলোর চারপাশে উদীপ্ত তারুণ্য নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এখানে গাছ লাগানোর কাজ করছে। প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনেই ৫টির উপরে গাছ লাগানো। টিলার উপরে চারদিকে সবুজে ঘেরা এই জায়গায় লাল টিনের চালগুলো বেশ সুন্দর রূপ ফুটে উঠেছে।

উদীপ্ত তারুণ্যের মুখপাত্র শিমুল তরফদার বলেন, আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি এখানে গাছ লাগানোর কাজ করছি। উপজেলা পরিষদ, কৃষি বিভাগ, বিভিন্ন নার্সারি, বন বিভাগ ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা এখানে গাছ নিয়ে আসছেন। আমাদের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম গাছগুলোকে সারিবদ্ধভাবে লাগিয়ে দিচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) প্রেমসাগর হাজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সে উদ্যোগের সাথে আমরা সবাই সামিল হতে চাই। এজন্য আমি উপজেলা পরিষদ ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এখানে গাছের চারা রোপণ করেছি। অনেকেই এক কাজ করছেন। আমাদের দেশে এখনো অনেক লোক গৃহহীন। সরকারের এই কার্যক্রমে অসহায় মানুষ বেচে থাকার জন্য ঘর পাক, তারা যেন রাস্তায় রাস্থায় ঘুমাতে না হয়। তাহলেই আমাদের দেশের উন্নয়ন হবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে মুজিববর্ষে অসহায় গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণ করে উপহার দিচ্ছেন। আমাদের শ্রীমঙ্গলে প্রথম ধাপে আমরা ৩০০টি ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীনদের কাছে তুলে দিয়েছিলাম। আমরা ২য় ধাপে আরও ৩০০টি ঘর পেয়েছি। এরই মধ্যে ১৬০টি ঘরের কাজ প্রায় শেষ। উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের মাজদিহী টিলার উপরের অবৈধভাবে দখল করা সরকারি জায়গা আমরা দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করে আমরা এই জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ করেছি।

তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাত্র দেড় কিলোমিটার এর ভিতরে ভৈরবগঞ্জ বাজার, মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। এক কিলোমিটারের মধ্য রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিক। ঘরের পাশাপাশি এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট, যোগাযোগ ও গ্রোথ সেন্টারসহ সবকিছুই থাকবে। এখানে পাহাড়ি এলাকায় তারা লেবু , আনারস ইত্যাদি ফসল চাষ করে নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই করতে পারবে। এখানে টিলার জায়গায় ঘর নির্মাণ করতে আমাদের কোন টিলা কাটতেও হয়নি। সুন্দর পরিবেশে এখানে সবুজে ঘেরা জায়গায় খুব ভালোভাবেই বসবাস করতে পারবে নতুন বাসিন্দারা। আগামী ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স এ যুক্ত হয়ে এখানে ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন।

ইউএনও নজরুল বলেন, আমি শ্রীমঙ্গলের সবার কাছে আহবান করেছিলাম এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে গাছ লাগানোর জন্য। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিরা এখানে কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছেন। ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছে এখন আশ্রয়ণ প্রকল্প দারুণ সুন্দর হয়ে উঠছে। আমরা প্রতিটি ঘরের পাশে ৫টি ফলের গাছ লাগিয়ে দিয়েছি। এই গাছগুলো টিকিয়ে রাখলে তারাই খেতে পারবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত