নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জুন, ২০২১ ০১:২৪

ভোটের আগেই অন্য লড়াইয়ে তিন প্রার্থী

সিলেট-৩ আসনে উপ নির্বাচন

শুরুটা শুরু করেছিলেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি চৌধুরী। পরে এতে যুক্ত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। দুজন জড়িয়ে পড়েন কথার লড়াইয়ে। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক শুরু করেন একেবারে আইনি লড়াই।

তিন প্রার্থীর এই অন্যরকম লড়াইয়ে প্রচারণা শুরু আগেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে নির্বাচনী মাঠ। সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনকে ঘিরে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পরই এই আসনে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস মিলছিল। এরপর শুরুতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার কথার লড়াই সেই আভাসকে আরও গাঢ় করে তুলে। আর হাবিবের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আতিকের আপিল জানান দিচ্ছে এখানে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

বাগযুদ্ধের শুরুটা করেন শফি চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৩ আসনের প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’

সাংসদ মাহমুদের মৃত্যুতেই এই আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সামাদের স্ত্রী ফারজানাসহ দলটির অন্তত দুই ডজন নেতা।

এরপর মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আগের দিনের বক্তব্য আবারও উল্লেখ করে শফি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যেই অসন্তোষ রয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন মানবিক দিক বিবেচনায় মাহমুদ উস সামাদের স্ত্রীকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার প্রতি সহানুভূতি না দেখানোর কারণে দলের নেতা-কর্মীরা মারাত্মক ক্ষুব্ধ।

‘এ ছাড়া দলের সিনিয়র নেতারা মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় দলটির নেতা-কর্মীরা অসন্তুষ্ট। তারাও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। জামায়াতও আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকার মানুষের সমর্থন উপেক্ষা করতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছুটে এসে প্রার্থী হতে হয়েছে।’

শফি চৌধুরীর এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। মনোনয়নপত্র সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তিনি। এতে এক সাংবাদিক শফি চৌধুরীর মন্তব্যের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় হাবিব বলেন, নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী নৌকা প্রতীকের পক্ষে রয়েছেন। অন্য যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তারাও তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে তিনি নির্বাচন করবেন।

নৌকা প্রতীকের বাইরে কোনো নেতা-কর্মী নেই দাবি করে হাবিব বলেন, ‘শফি চৌধুরী বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বয়স্ক মানুষ। কোন সময় কী বলেন, কী করেন তার ঠিক নেই। তার কর্মীদেরই বলতে শুনেছি, বয়সের কারণে তিনি প্যান্টে প্রস্রাব-পায়খানা পর্যন্ত করে দেন। সুতরাং তার কথায় কান দিয়ে লাভ নেই।’

তরুণ হাবিবের এমন মন্তব্য নজরে পড়েছে প্রবীণ শফি আহমদের। শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৮৪ বছর। আজকেও সারা দিন নির্বাচনী কাজে এলাকায় ছিলাম। একবারও বাথরুমে যেতে হয়নি। আমার কাপড়চোপড়ও অপরিষ্কার হয়নি। এখনও অজু আছে।’

প্রবীণ এই বিএনপি নেতার দাবি, তিনি বিএনপির রাজনীতি করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন।

এদিকে, দুই নেতার এই বাগযুদ্ধে উত্তাপের মধ্যেই ২০ জুন হাবিবের দ্বৈত নাগরিকত্ব চ্যালেঞ্জ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান। তার অভিযোগ, রিটার্নিং কর্মকর্তা একতরফা রায় দিয়েছেন, তাদের কথা শোনেননি। যে কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বুধবার নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগের ওপর শুনানি করে। তবে অভিযোগের শুনানিতে রায় হাবিবের পক্ষে যায়।

এদিকে ইসির এই রায়ে অসন্তুষ্ট আতিকুর রহমান উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। ফলে আগামীদিনে এই আসনে তিন প্রার্থীর লড়াই আর চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৮ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত