নিজস্ব প্রতিবেদক:

৩০ জুলাই, ২০২১ ২২:৫৪

স্থানীয়দের উদ্যোগে মেরামত হচ্ছে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা

মৌলভীবাজারের বড়লেখায়

বড়লেখায় সোনাই নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বোয়ালী-বিহাইডর রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। গত রোববার (২৫ জুলাই) থেকে রাস্তাটির বোয়ালী এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০ ফুট জায়গা মেরামত কাজ শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডির আওতাধীন বোয়ালী-বিহাইডর-ভট্টশ্রী রাস্তাটি ২ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। সোনাই নদীর পূর্ব পাড় ঘেঁষে যাওয়া রাস্তাটি উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে বোয়ালী, বিহাইডর, ভবানীপুর, ভট্টশ্রী, উজানিপাড়া, সারোপারসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ চলাচল করেন। সোনাই নদী প্রায় চার বছর ধরে এই এলাকায় একটুআধটু করে ভাঙছে। বছর খানেক আগে রাস্তাটির পাকার কাজ করা হলে স্থানীয় গ্রামবাসী, প্রবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে বোয়ালী এলাকার ভাঙন মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু রাস্তা পাকা হওয়ার কিছু দিন পর থেকেই বোয়ালীতে আবার ভাঙন দেখা দেয়। একপর্যায়ে প্রায় ৬০ ফুট জায়গা ভাঙনের ফলে রাস্তাটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন ভাঙনের স্থানে গাছের গোড়া ফেলে ও বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পায়ে হেঁটে এপারওপার যাতায়াত করেন। কিন্তু রোগী পরিবহন ও জরুরি কাজে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। এই ৬০ ফুট ভাঙনের কারণে গ্রামবাসীর দুর্ভোগ চলতেই থাকে। এদিকে গত মাস খানেক থেকে এই ভাঙনের প্রায় ৬০-৭০ ফুটের কাছাকাছি নতুন করে আরেকটি ভাঙন শুরু হয়েছে। এবার আর কারো অপেক্ষায় না থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী, নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা এলাকার প্রবাসীরা নিজেরাই ভাঙন মেরামতের কাজে এগিয়ে এসেছেন। তাদের এই উদ্যোগের সাথে শামিল হয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় সাংসদ  এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। সবার আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে গত রোববার থেকে সড়কের বোয়ালীর ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০ ফুট এলাকার ভাঙনের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। বাঁশ ও গাছের আড়া বেঁধে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। ভাঙন রোধের কাজ শেষ হলে সেখানে ইট ফেলে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে এতে রাস্তা কতটুকু স্থায়ী হবে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে।

রাস্তা মেরামত কাজের সমন্বয়ক, স্থানীয় বাসিন্দা ও বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সহ সম্পাদক তোয়াহিদুর রহমান টিপু বলেন, ‘ভাঙনের কারণে মানুষ কষ্ট করছেন। এখন আমাদের মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান এবং এলাকাবাসী ও প্রবাসীর সহযোগিতায় মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছে। রাস্তাটির এই ভাঙনের স্থান দিয়ে যাতে অন্তত একটি ছোট গাড়ি চলতে পারে। কাজ চলছে। তবে কতটুকু টিকবে বলা যাচ্ছে না। আমাদের এলাকায় বর্তমান সরকারের সময় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এই ভাঙন সকল উন্নয়নকে ¤øøান করে দিচ্ছে।’ তিনি ভাঙন রোধে দ্রæত স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন বলেন, ‘প্রায় চার বছর ধরে সোনাই নদীর পূর্বদিকে ভাঙছে। এই ভাঙনে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাটি পাকা করার সময় টিআর, ইউনিয়ন পরিষদ, আমার ব্যক্তিগত ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় লাখ টাকা খরচ করে বাঁশের আড়া দিয়ে রাস্তার কাজ করানো হয়েছিল। কিন্তু রাস্তা টেকানো যায়নি। দুটি স্থানে ভেঙেছে। বর্তমানে মন্ত্রী মহোদয়ের বিশেষ টিআর, আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও গ্রামের মানুষ এবং প্রবাসীদের টাকায় কোনোমতে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এটাও টিকবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে ভাঙনের স্থায়ী মেরামত করতে হবে।

বড়লেখা উপজেলা প্রকৌশলী মো. সামসুল হক ভূঞা বলেন, ‘রাস্তাটির পাশ দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বাঁকে (নদীর) অতিরিক্ত ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণনের ফলে রাস্তার নিচের মাটি সরে গিয়ে রাস্তা ভেঙে যায়। পাউবোর বিশেষজ্ঞ টিমদ্বারা পরামর্শ ক্রমে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাঁধ নির্মাণ না করা হলে এই রাস্তা রক্ষা করা সম্ভব নয়।’

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পওর শাখা-৪ এর উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী বলেন, ‘নদী ভাঙনে রাস্তাটির দুটি জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিনে দেখে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত