এস আলম সুমন, কুলাউড়া

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:১৩

কুলাউড়ার কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারটি যেন ময়লার ভাগাড়!

কুলাউড়ার কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চার বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এই গ্রন্থাগার সংরক্ষণের অভাবে এখন জলাবদ্ধ অবস্থায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। গ্রন্থাগারের সংগৃহীত প্রখ্যাত লেখকদের লেখা মূল্যবান বইগুলোও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র তৎকালীন ডাকবাংলো (বর্তমান স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ) প্রাঙ্গণে একটি ভবনে প্রায় ৩৬ বছর আগে ‘কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ২৬ জুন তৎকালীন ইউএনও সিরাজুল ইসলাম এটি উদ্বোধন করেন। একজন লাইব্রেরিয়ান এবং একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালনের জন্য কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচিত করা হতো। বই সংগ্রহ ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হতো উপজেলা পরিষদ এবং লাইব্রেরির সদস্যদের মাসিক চাঁদা থেকে। এ জন্য লাইব্রেরির একটি ব্যাংক হিসাবও খোলা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের সামনে ভ্রাম্যমাণ কাঠের আসবাবপত্রের দোকান বসিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনের বারান্দা ও ঘরের ভেতরের মেঝেতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। ঘরের ভেতর জমে থাকা পানিতে গ্রন্থাগারের বই, শেলফ ও আসবাব নষ্ট হয়ে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বৈদ্যুতিক পাখা ঝুলন্ত অবস্থায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

গ্রন্থাগারের সাবেক লাইব্রেরিয়ান খুরশীদ উল্ল্যাহ্ বলেন, ‘২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করি। সহকারী লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করেন মো. শামছুদ্দিন। আমার অবর্তমানে তিনি সব দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান। এরপর থেকে এটি সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

গ্রন্থাগারের সদস্য সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘১৯৯৪ সালে আমি গ্রন্থাগারের সদস্য কার্ড সংগ্রহ করি। এখান থেকে অনেক বই নিয়ে পড়তাম। গ্রন্থাগার ঘিরে প্রতিদিন এখানে সাহিত্য আড্ডা জমে উঠত। অথচ গণগ্রন্থাগারটি এখন ময়লার ভাগাড় হিসেবে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এটি পুনরায় সচল করার দাবি জানাই।’

কুলাউড়ার লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘একটি এলাকা ইতিহাসকে সমৃদ্ধ ও সাহিত্য বিকাশে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। কুলাউড়া গণগ্রন্থাগারটি একসময় এ অঞ্চলের আলোর বাতিঘর ছিল। এখন এটি আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ধ্বংসস্তূপের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বর্তমান নেতৃত্ব যদি এটির পুনর্জাগরণ না ঘটায়, তবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কি জবাব দেবেন? গ্রন্থাগারকে সচল করে নতুন প্রজন্মকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির পথে নিয়ে আসা প্রয়োজন। নয়তো প্রজন্ম অপসংস্কৃতির অতলে পড়বে।’

এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরিটি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে গুরুত্বসহকারে উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য একটি সভায় আলোচনা হয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনটিতে সচল করা যাবে না। স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণে একটি নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। সেটি সংস্কার করে সেখানে লাইব্রেরিটি স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত