রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর:

১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০১:১৭

জগন্নাথপুরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অগ্রগতি নেই

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। গত ১৫ ডিসেম্বর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলেও গত এক মাসে নির্মাণে কোনো অগ্রগতি না থাকায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়ে স্থানীয় পাউবোর লুকোচুরি চলছে।

গত শনিবার বিভিন্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা গেছে, হাওরগুলো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। কোথাও কোনো কাজ নেই।

জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া ও মইয়ার হাওর সরেজমিন দেখা গেছে, নলুয়া হাওরের পোল্ডার ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ এবং মইয়ার হাওরের বাঁধ প্রকল্পে কোনো কাজ শুরু হয়নি। এসব প্রকল্পের মধ্যে নলুয়া হাওরের ৪ নম্বর উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পে নামমাত্র সামান্য মাটি পড়ে আছে। এছাড়াও ২৮ প্রকল্পেই কাজে কোনো অগ্রগতি নেই বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছন।

কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ২৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধের কাজ শুরুর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর নলুয়ার হাওরের ভূরাখালি এলাকায় ৪ নম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম।

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২৮ প্রকল্পের জন্য এবার প্রাথমিকভাবে তিন কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ২৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এক নম্বর প্রকল্পের কমিটি এখনও হয়নি।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়ে পাউবো একেক সময় একেক কথা বলছে। গত ৫ জানুয়ারি বেড়িবাঁধ সংক্রান্ত একসভায় স্থানীয় পাউবোর পক্ষ থেকে জানানো হয় ১৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হবে।

গত শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানানো হয়, গত দুই সপ্তাহ পূর্বে ২৭টি প্রকল্প কমিটি গঠন শেষ হয়েছে। এছাড়া সবকটি প্রকল্পের কার্যাদেশ হয়েছে। তবে এখনও কোনো কোনো প্রকল্পের কার্যাদেশ পাননি প্রকল্পের দায়িত্বরত লোকজন। এমন তথ্য বাঁধের কাজে সম্পৃক্ত লোকজনই জানিয়েছেন।

নলুয়া হাওরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সভাপতি জানান, এখনও বেড়িবাঁধের কার্যাদেশ পাননি। এজন্য কাজ শুরু করতে পারেনি।

নলুয়ার হাওরের উদ্বোধন হওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আহমেদ আলী বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বর আমার প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন হয়। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ নানা ব্যস্ততায় কাজ শুরু করতে পারিনি। দ্রুত কাজ শুরু করে দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ করব।’

নলুয়ার হাওরের ভূরাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের এখন পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু হয়নি। একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হলে নামমাত্র মাটি কাটার পর থেকে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, জেলার বৃহৎ নলুয়ার হাওরটি আগাম বন্যায় ফসল হানির ঝুঁকিতে থাকে। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় কৃষকরা চিন্তিত।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক অমিত দেব বলেন, হাওর ঘুরে এখন পর্যন্ত হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ শুরুর চিত্র দেখা যায়নি। ফসল রক্ষায় এমন গাফিলতি মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি দ্রুত কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে দাবি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা ও ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ সংস্কার তদারক কমিটির সদস্য সচিব হাসান গাজী বলেন, ২৮টি প্রকল্পের মধ্যে ২৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাঁধের কাজে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। নানা কারণে এবার হাওরে বাঁধের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে সবকটি প্রকল্প কমিটিকে প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে জোরে শোরে কাজ শুরু করাতে পারব।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ সংস্কার তদারক কমিটির আহ্বায়ক সাজেদুল ইসলাম বলেন, হাওরে মাটি কাটার খনন যন্ত্র দিয়ে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ করার উপযোগী পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় কাজ শুরুতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এখন পুরোদমে কাজ চলবে এবং নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত