ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ

১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১৬:৪৮

শান্তিগঞ্জে বই আসতে বিলম্ব, ব্যাহত পাঠদান

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে এখনো পৌঁছায়নি পাঠ্যবই। ৬ষ্ঠ শ্রেণির সম্পূর্ণ ও ৭ম শ্রেণির সাত বিষয়ের বই পাওয়া গেলেও ৮ম ও নবম শ্রেণিতে বলার মতো কোনো বই পায়নি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

অষ্টম শ্রেণিতে শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ও নবম শ্রেণির বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ছাড়া আর কোনো বই পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। এজন্য কোনো কোনো ক্লাসের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হলেও ৮ম আর ৯ম শ্রেণির ক্লাস পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। পুরোনো বই দিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাস শুরু করার চেষ্টা করলেও তা শতভাগ ফলপ্রসূ হচ্ছে না। তাই এ উপজেলায় ব্যাহত হচ্ছে মাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেণিকক্ষের পাঠদান। তবে এটি শুধু শান্তিগঞ্জ উপজেলার নয়, করোনা মহামারির কারণে সমস্যাটি সমস্ত দেশব্যাপী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

উপজেলা শিক্ষা বিভাগের একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুল পর্যায়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির সকল বই দেওয়া হয়েছে। ৭ম শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে ৭টি বিষয়ের বই। ৮ম শ্রেণিতে শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং নবম শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে মানবিক বিভাগের বিজ্ঞান ও আইসিটি। বিজ্ঞান বিভাগের গ্রুপিং বিষয় (রসায়ন, পদার্থ ও জীববিজ্ঞান) দেওয়া হলেও অন্যান্য বিষয় এখনো দেওয়া হয়নি। ব্যবসায় বিজ্ঞান বিভাগেও বিজ্ঞান বিষয় ছাড়া আর কোনো বই দেওয়া যায়নি।

সূত্র জানিয়েছে, বই আসার প্রক্রিয়া চলমান। দ্রুতগতিতে বই আসছে। চলতি মাসের মধ্যেই সব বই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলা হয়েছে, যেহেতু যৌক্তিক কারণে বই আসতে দেরি হচ্ছে সেহেতু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরোনো বই সংগ্রহ করে যতটুকু সম্ভব শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে। শিক্ষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ জটিলতায় পুরোনো বই সংগ্রহের কাজটাও ব্যাহত হচ্ছে।

বই না পাওয়ার বিষয়টি অভিভাবক মহলে হতাশাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারেনি। স্কুল যখন খুললো তখনও সপ্তাহে একদিন, দু’দিন, চারদিন করে ক্লাস হচ্ছে। তারওপর শিক্ষার্থীদেরকে বই দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি হতাশার। সরকারের উচিৎ খুব দ্রুত শিক্ষার্থীদের হাতে সম্পূর্ণ বই পৌঁছে দেওয়া। তা না হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশ ভাব চলে আসবে।

মাহবুবা আক্তার নামের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, সবাই ক্লাস শুরু করেছেন, আমরা এখনো বই-ই পাচ্ছি না। কবে বই পাবো? সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদেরকে দ্রুত বই দিয়ে দিন।

পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম। সুনামগঞ্জের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমান আহমদ নিবিড়ের অভিভাবক তিনি। শাহ আলম বলেন, আমার ছেলে নিবিড় এখনো কোনো বই পায়নি। জানুয়ারি মাস চলে যাচ্ছে। ক্লাসে যাচ্ছে ঠিক কিন্তু বই ছাড়া। এমনটা চলতে থাকলে সে শিখবে কী? সরকারের উচিৎ দ্রুত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া।

সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো সব বই পাইনি। তবে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস শুরু করেছি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরোনো বই সংগ্রহের চেষ্টা করছি। নতুন বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা হতাশ। প্রতিদিনই শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা নতুন বইয়ের জন্য খোঁজ নিচ্ছেন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক রঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা। এ বছর করোনা মহামারির কারণে বই আসতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। একই কারণে বই ছাপানোসহ সব ধরনের কাজই ব্যাহত হচ্ছে। তবে বই আসতে শুরু করেছে। এ মাসের মধ্যেই আশা করছি সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে বই পৌঁছে দিতে পারবো।

সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে বইগুলো আমাদের দায়িত্বে আসতো। এখন সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তবু আমরা নিয়মিত খবর নিই। বই প্রতিদিনই আসছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে সারা জেলার সব শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছে যাবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সংকট কমাতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছর সরকার ২৯৬ কোটি ৭ লাখ টাকার পাঠ্যপুস্তক প্রদানের উদ্যোগ নেয় এবং ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি এটি প্রথম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার চলতি বছর প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অন্যূন ৩৫ কোটি বই মুদ্রণের পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৪টি এবং মাধ্যমিকের ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬টি বই রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত