নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০১:১৮

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে, তবু অনশন ভাঙছেন না শাবির শিক্ষার্থীরা

'অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন অনশন ভেঙে ফেলেছে। আমি অনশন ভাঙিনি। অনশন ভাঙবো না। হাসপাতালেও অনশন চালিয়ে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত এই স্বৈরাচারী ভিসি পদত্যাগ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন থাকবো'। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এমনটি বলছিলেন অনশনরত শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাইম নিশাত।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ শিক্ষার্থী। নিশাতও তাদের একজন। অনশনকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এরআগে সন্ধ্যায় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে নিশাতকে যখন এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি হাসপাতালে যাব না, আমি তো বলেই এলাম—আমরণ অনশন করতে এসেছি। হাসপাতালে কেন যাব? আন্দোলনে এসেছি না?’

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৭ জন শিক্ষার্থীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ রাত ১২টার দিকে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুস্থদের মধ্যে চারজন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দুজন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

অনশনে থাকা বাকিরা তীব্র শীত আর অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের আটজনের শরীরে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে।

অনশনকারীদের মধ্যে সবার আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাজল দাশকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাজলও বলেন, 'এই অযোগ্য ভিসি যদি পদত্যাগ না করে তবে আমি মরার আগ পর্যন্ত অনশন ভাঙবো না। কোনোভাবেই ভাঙবো না। ভিসি পদত্যাগ করলেই ভাঙবো।'

হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে মরিয়ম রুবি নামের এক শিক্ষার্থীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তিনিও অনশন ভাঙছেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

অনশনরত শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, আমাদের অনেকেই কমবেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের পূর্ব ঘোষণায় অনড়, এই উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবো।

অনশনস্থলে এদিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

গত বুধবার ২৪ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করলেও একজনের বাবা হার্ট অ্যাটাক করায় তিনি অনশন থেকে উঠে বাড়িতে যান।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন। এতে সহস্ত্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মিছিলটি উপাচার্যের বাসবভনের সামনে থেকে শুরু হয়ে চেতনা একাক্তর হয়ে আবার উপাচার্যের বাসভভনের সামনে এসে শেষ হয়।

বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষেরর বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলন শুরু হয়।

প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর রোববার পুলিশি হামলার পর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে।

রোববার সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার পর সোমবার দুপুর বারোটার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলে তালা ঝুলিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত