নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:৫১

‘শাবিতে তালেবানি সংস্কৃতি চালু করেছেন ভিসি ফরিদ’

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবানি সংস্কৃতি চালু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার পদত্যাগের দাবিতে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে চার বছরে শাবির উপাচার্য থাকাকালে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ও তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে অনশনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তা চর্চার সূতিকাগার ছিলো। যে কোন ক্রান্তি লগ্নে দেশের মানুষ যা প্রত্যাশা করে এখানকার শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনেক সময় সেই প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখানে এক ধরনের মুক্ত সংস্কৃতির পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু এই উপাচার্য এসে গত চার বছরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবানি সংস্কৃতি চালু করেছেন।

নিজেদের দাবিকৃত ‘তালেবানি সংস্কৃতি’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে আন্দোলনের সময় আমরা ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বড় রোড পেইন্টিং করেছিলাম। এরপর বিভিন্ন উপলক্ষে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে পেইন্টিং করতাম। কিন্তু এই উপাচার্য এসে রোড পেইন্টিং বন্ধ করে দেন। আমাদের ক্যাম্পাসে ২৬টি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। সারাবছরই এগুলোর কর্মকাণ্ড থাকতো। তবে ভিসি ফরিদ এসে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ আরোপ করেন। তাদের রিহার্সালের জন্য রুম দেয়া হয় না। অনুষ্ঠানের জন্য অডিটোরিয়াম দেয়া হয় না।

শাহরিয়ার বলেন, আমরা ছেলে-মেয়ে কখনো বিভাজন করি না। আমাদের সংবিধানেও বিভাজন নেই। কিন্তু এই উপাচার্য এসে মেয়েদের সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশনা জারি করেন। যা খুবই বৈষম্যমূলক।

অনশনকারী আরেক শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো টং দোকান ছিলো। কিন্তু এই উপাচার্য এসে সবগুলো বন্ধ করে দেন। ফলে শিক্ষার্থীরা খাবার সঙ্কটে পড়ে।

অপূর্ব বলেন, যখন টং উঠিয়ে দেওয়া হয় তখন উপাচার্যের পক্ষ থেকে বলা হয়- টং নিম্নশ্রেণির মানুষেরা ব্যবহার করে। এ থেকই তার মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা শ্রেণি সচেতন কার্যক্রমে অভ্যস্ত ছিলো। কিন্তু এই উপাচার্য তালেবানি সংস্কৃতি চালুর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য ঢুকিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকদের জন্য অপ্রয়োজনে অনেকগুলো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস কেনা হয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত বাস নেই।

অনশনকারী শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার বলেন, আজকে আমাদের ফুড কোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হলে আমাদের খাবার এনে দিতেন যে বাবুর্চি তাকে হুমকি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এখনকার আন্দোলন কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আজকের যে আন্দোলন তা চারবছরের তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের ফসল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের হামলা চালাতে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে শাবির ৫ শিক্ষার্থীকে আটক প্রসঙ্গে শাহরিয়ার বলেন, আমরা যে কোনো কর্মসূচিতেই আমাদের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিই। এটা নতুন না। ছোট ভাইদের কর্মসূচিতে বড় ভাইদের সহায়তা দেওয়া কীভাবে অপরাধ হয়। বাংলাদেশের কোন আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অর্থ দেয়ার জন্য সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার হলো?

তিনি সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তি দাবি করেন।

হামলার একটা বিশাল ভূমিকা আছে। তবে এরআগের ঘটনাগুলো পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ।

শিক্ষার্থীদের চলমান অনশন চলবে কী না এই সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিলো। সংবাদ সম্মেলনে অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন অনশনকারীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত