নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ মে, ২০২২ ২৩:৪৫

সুরমার পানি কোথাও কমছে, কোথাও বাড়ছে

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। রোববার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ফলে নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে একাধিক নদীরক্ষা ডাইক ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জকিগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নগুলোর অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানি ওঠে গেছে বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও।

রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে, সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে কিছুটা কমেছে। তবে এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পাওয়া হিসেবে, কানাইঘাটে ১.২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। তবে শনিবার একই সময়ে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১.৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

কানাইঘাট পয়েন্টে পানি কমলেও বেড়েছে অমলসীদে। সেখানে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার প্রায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এ ছাড়া সারি নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

টানা বৃষ্টি ও ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের জকিগগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলার অন্তত ১৩টি ইউনিয়ন। পানিবন্দি হয়ে আছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা ও মাছের খামার।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা। ঢলে শনিবার রাতে এই উপজেলার সুরমা নদী রক্ষা ডাইক ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ফলে তলিয়ে গেছে উপজেলার বারহাল ও মানিকপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ ছাড়া কাজলসার ইউনিয়নের কিছু এলাকায়ও পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার রাস্তাঘাট। ফলে বন্ধ হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ।

জকিগঞ্জের প্রধান ডাকঘর, প্রাণী সম্পদ অফিস, স্থল শুল্ক স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাও পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান, ইউনিয়নের নোয়াগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, চকবারাকুলি, শরীফাবাদ, শাহগলী বাজার ও কচুয়ায় সুরমা নদীর ডাইক ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোরো ধান। বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জকিগঞ্জের ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পল্লব হোম দাস জানান, জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নে সুরমার ৫টি ডাইক ভেঙেছে এবং বারোহালে ১টি ডাইক ভেঙে অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

ইউএনও বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ১৮ হাজার মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে, আপাতত শুকনা খাবার বিতরণ বা আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রয়োজন হয়নি।’

এদিকে কোম্পানীগঞ্জেও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরেও ঢুকে পড়েছে পানি।

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে পানি নিষ্কাশনজনিত কারণে জলাবদ্ধতা আছে।’

শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদা জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ১২ মেট্টিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার থেকে এই চাল বিতরণ শুরু হবে।’

বন্যায় প্লাবিত হয়েছে কানাইঘাট বাজারও। পানি ঢুকেছে বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। এ ছাড়া কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক, কানাইঘাট-গাছবাড়ী গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কানাইঘাটের ইউএনও সুমন্ত ব্যানার্জি বলেন, ‘বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসন থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে বন্যা কবলিত এলাকার জন্য ১৯ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। সোমবার থেকে তা বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া শুকনো খাবারের চাহিদাও জানানো হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় পাঁচটি উপজেলার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় বন্যাকবলিতদের জন্য ইতোমধ্যে ১০৯ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত আছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত