সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৭ মে, ২০২২ ১৮:১২

সুনামগঞ্জে বন্যায় প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা

টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা নদীসহ সকল শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। এরই মধ্যে বন্যার সতর্কতা জারি করেছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সুনামগঞ্জ পাউবো জানিয়েছে, ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় সুনামগঞ্জের সুরমা, পাটলাই, আপারবুলাই, কামারখালিসহ সব কটি শাখা নদী ও হাওরের পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাউবো জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ৭ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে প্লাবিত হয়েছে ছাতক উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে। একই সঙ্গে পানিতে ডুবে গেছে অনেক সড়ক।

আরও জানা যায়, সম্প্রতি জেলায় ১৫টিরও বেশি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকায় তড়িঘড়ি করে ধান কেটে নেয়া কৃষকরা নতুন বিপদের সম্মুখীন। বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় চারা গজিয়ে গেছে এসব ধানে। চারপাশে পানি থইথই করায় রাস্তাগুলোতেই ধান ও বাদাম শুকানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা।

জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আসামে বন্যা পরিস্থিতি এবং মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।

সুনামগঞ্জের আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আলী বলেন, ‘পানি বেড়ে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে স্থানীয়রা।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বসতভিটা হারানো ছাত্তার আলী বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল আমার সব নিয়ে গেছে। কাজ করে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে অনেক কষ্টে একটি ঘর করেছিলাম, সেটিও বানে ভেসে গেল। এখন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম জানিয়েছেন, গত দুই দিনে নদনদীগুলোতে পানির চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের গজারিয়া নদীর রাবার ড্যামের পাম্পহাউস নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত জেলার নিম্নাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ উজানে প্রচুর বৃষ্টির ফলে জেলার নদনদীতে পানি বাড়ছে। পানি আজ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত