নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ মে, ২০২২ ১২:৩৫

সিলেটে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে বন্যার্তরা

জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢোকায় দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। বিশুদ্ধ পানিসহ খাবার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জকিগঞ্জ: জকিগঞ্জ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। উপজেলার সাতটি স্থানে সুরমা নদীর ডাইক ভেঙে গত শনিবার থেকে তিনটি ইউনিয়নের লোকালয়ে পানি ঢুকছে। কুশিয়ারার বিভিন্ন স্থানে ডাইকের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুরমা নদীর ডাইক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নিকপুর কাজলশার ও বারহাল ইউনিয়নের অন্তত ৩৫টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। শাহগলী বাজারে গতকাল ছিল দুই থেকে তিন ফুট পানি। বালাই ও মইলাট হাওরের অন্তত সাত শ একর পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

জৈন্তাপুর: কয়েক দিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বন্যায় উপজেলার ৫ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে দরবস্ত, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। গতকাল মঙ্গলবার দরবস্ত, ফতেপুর, চিকনাগুল ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ দেখা গেছে। বন্যাকবলিত গ্রামের মানুষ গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। অপরদিকে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অঞ্চলের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্বনাথ: বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। সুরমাসহ প্রধান নদী-নদীগুলোর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে নদ-নদীর পানি বেড়ে বিভিন্ন উপজেলায় পানি ঢুকে পড়েছে। বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও, মাহতাবপুর, মাধবপুর, শাহপুর, সাহেবনগর, শাখারীকোনা, মাখরগাঁও, আকিলপুর, রসুলপুর, তিলকপুর, বাওনপুর, মির্জারগাও, হজারীগাঁও, খাজাঞ্চীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক এলাকার রাস্তায় হাঁটুপানি।

কোম্পানীগঞ্জ: কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আউশ ধানের বীজতলা ও রাস্তাঘাট। অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ও নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বন্যাদুর্গতরা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে আছেন। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা আরও বাড়ার শঙ্কা করছেন উপজেলাবাসী।

গোলাপগঞ্জ: গোলাপগঞ্জের বাঘা ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে এ দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন জনপদ। পানিবন্দী রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ২০০৪ সালের পর নদীর পানি কখনো এতোটা বাড়েনি। ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।

এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইয়িদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তাছাড়াও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টিও কমছে না। তাই পাহাড়ি ঢল নামছে এবং আমাদের দেশেও পানি বাড়ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত