শাকিলা ববি

২৮ মে, ২০২২ ২৩:৩৮

সিলেটে হঠাৎ বেড়েছে আত্মহত্যা

শুক্রবার সিলেট নগরীর পাঠানটুলা গোয়াবাড়ি মোহনা আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ২২নং বাসার একটি কক্ষ থেকে  মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের সৌরভ দাশ রাহুল নামে এক ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত বুধবার সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের নতুন ছাত্রী হোস্টেল থেকে স্মৃতি রানী দাস (২০) নামের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার আব্দুর রশিদ (৬০) নামে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি তার বসত ঘরের ২য় তলায় উঠার সিঁড়ির চালাঘরের তীরের সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগাইয়া আত্মহত্যা করেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে তারা আত্মহত্যা করেছেন।

সিলেটে হঠাৎ বেড়ে গেছে আত্মহত্যার প্রবনতা। কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, ধনী, দরিদ্র সবার মাঝেই আত্মহত্যার প্রবনতা দেখা দিয়েছে। গত তিন দিলে সিলেটে তিনটি আত্মহত্যা সংগঠিত হয়েছে। এরমধ্যে দুজন সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের শিক্ষার্থী ও একজন ৬০ বছর বয়সি বৃদ্ধ।

মনোরোগ বিজ্ঞানীদের মতে, সবাই এখন আমরা সোস্যাল মিডিয়ায় যেভাবে সক্রিয় সেভাবে পারিবারিক সামাজিক ভাবে সক্রিয় না। যে জন্য এখন মানুষজনের একাকিত্ত চলে এসেছে। এছাড়া কারোনাকালের সামাজিক দূরত্ব মানুয়ের একাকিত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেছে।  সামাজিক ভাবে আমরা একা থাকছে। মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা হৃদত্তা কমে গেছে। তাই সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপে হতাশা বাড়ছে। সামজিক যোগযোগ মাধ্যমে আসক্তির কারণে মানুষ একা হয়ে যাচ্ছে।ফলে  মানুষজন আত্মহত্যা করছে। পাশাপাশি অপ্রাপ্তি,  হতাশা, প্রতারণা, মানসিক অবসাদ, পারিবারিক নির্যাতন ও অতিরিক্ত আবেগ প্রবণতার কারণেই বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার হিসাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. লুৎফর রহমান জানান, ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সিলেট জেলায় আত্মহত্যা করেছে ৩৯৬ জন। এরমধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩১৫ জন। বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ৭৯জন ও গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। তিনি জানান সিলেটে ২০২০ সালে ৯৩টি, ২০২১ সালে ৯৯টি ও ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৩০টি আত্মহত্যা সংগঠিত হয়েছে।

সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুন নাহার তানিয়া বলেন, আত্মহত্যা বেশি হচ্ছে কারণ মানুষের মধ্যে এখন শেয়ারিং কেয়ারিং কমে গেছে। সবাই এখন আমরা সোসাল মিডিয়ায় যেভাবে একটিভ সেভাবে পারিবারিক সামাজিক ভাবে একটিভ না। যে জন্য এখন মানুষজনের একাকিত্ত চলে এসেছে। আগে যেভাবে মানুষজন নিজেদের সম্যসাগুলো পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের কাছে শেয়ার করতো এখন আর তা করছে না। সামাজিক ভাবে আমরা একা থাকছি। মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা হৃদত্তা কমে গেছে। এমনিতে দেখা যায় অনেক বন্ধু আছে, পরিবারে অনেক সদস্য আছে কিন্তু সাহায্য চাওয়ার মত ভরসা করার মানুষ পাচ্ছেন না । সেজন্যই মানুষজন আত্মহত্যার দিকে ঝুকে পড়ছে।

ডা. জান্নাতুন নাহার তানিয়া বলেন, এক সময় একধরনের শ্রেণি পেশার মানুষজন আত্মহত্যা করতেন। যেমন কখনো উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা, কখনো যুবরো। তবে এখন সব বয়সের সব শ্রেনি পেশার মানুষ এই অস্বাভাবিক কাজটি করছেন। কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আমার মনে হয় করোনাকালে মানুষ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি দূরে সরে গেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মানুষজনের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের জায়গাটা এখনো পূরণ হয়নি। সোসাল মিডিয়ার কারণে এমনিতেও মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টা চলে এসেছিল। কারোনাকাল এই সামাজিক দূরত্বটা আরেও বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। এই সামাজিক দূরত্ব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। বাচ্চাদের জন্য আরও খারাপ এই ব্যপারটা। করোনার পর থেকে যত রোগী পেয়েছি সবাই বলেছেন এই দুই বছরে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে গেছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা পেয়েছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত