নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ জুলাই, ২০২২ ২২:৩৯

ঘর তৈরির টিন পেলেন দলদলি বাগানের সেই চা শ্রমিকরা

ঢলে ঘর পুরো ভাসিয়ে নিয়েছিল পূর্ণ দাসের। ভিটে ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না তার। সিলেটের বালুচর এলাকার দলদলি চা বাগানের শ্রমিক তিনি। নতুন করে ঘর তৈরির মতো সামর্থ্যও ছিল না দরিদ্র এই শ্রমিকের। তাই ১৪ দিন ধরে আত্মীয়র বাড়িতে ছিলেন আশ্রিত।

এ নিয়ে সিলেটটুডেতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর শনিবার ঘর তৈরির জন্য টিন উপহার পেয়েছেন পূর্ণ দাস।

টিন পেয়ে উচ্ছ্বসিত পূর্ণ বলেন, ‘আইজকে আমি বহুত খুশি। এইভাবে আমাদের কেউ টিন উপহার দেবে তা কোনোদিন ভাবিনি। ভগবান তাদের বালা (ভালো) করুক।’

কেবল পূর্ণ দাসই নন, শনিবার ঘর তৈরির জন্য টিন উপহার পেয়েছে ওই বাগানের ২০টি শ্রমিক পরিবার।

গত ১৮ জুন পাহাড়ি ঢল আর টিলা ধসে এই পরিবারগুলোর ঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সর্বস্ব হারিয়েও তারা কোনো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছিলেন না। কারণ টিলাভূমি হওয়ায় অপেক্ষাকৃত উঁচু ওই এলাকাটিতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এমনটিই ভেবেছিল সবাই।

এ নিয়ে গত ৩০ জুন সিলেটটুডেতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন দেখে শনিবার ‘দুর্যোগ পীড়িতদের পাশে লেখক-শিল্পী-সাংবাদিক-প্রকাশক’ এর ব্যানারে ক্ষতিগ্রস্থদের ঘর তৈরির জন্য টিন উপহার দেয়া হয়।

এ ছাড়াও ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দলদলি চা বাগানের ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেন লেখক ও শিক্ষক আশিক শাওন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উষা।

টিন পেয়ে খুশি দলদলি চা বাগানের প্রবীণ শ্রমিক জয়ন্ত দাস বলেন, ‘১৪ দিন ধরে আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রিত আছি। এতদিন কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। মাত্র ১২০ টাকা মুজুরিতে কাজ করি। এতে খাওয়ার ব্যবস্থাই হয় না। তাই ঘর মেরামত নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ টিন উপহার পাওয়ায় অনেক উপকার হয়েছে। এখন ঘর তৈরির কাজ শুরু করবো।’

গত বৃহস্পতি এবং শুক্রবার খাবার উপহার পাওয়ায় উচ্ছ্বাস দেখান ওই বাগানের শ্রমিক শকুন্তলা দাসও।

দলদলি চা বাগানে টিন বিতরণ প্রসঙ্গে ‘দুর্যোগপীড়িতদের পাশে লেখক-শিল্পী- সাংবাদিক-প্রকাশক’ এর সমন্বয়ক কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান বলেন, ‘আমরা ফান্ড তুলে সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা করতে এসেছিলাম। এখানে এসেই দলদলি চা বাগানের শ্রমিকদের দুর্গতির কথা জানতে পারি। পরে সুনামগঞ্জে ত্রাণ ও সহায়তা বিতরণ শেষে উদ্ধৃত অর্থ দলদলি চা বাগানের ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের মাঝে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিই।’

শনিবার টিন বিতরণে উপস্থিত থেকে বিনয় ভদ্র বলেন, ‘চা শ্রমিকরা এমনিতেই দরিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। তারা সব সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। ঘর হারিয়ে তারা আরও বিপাকে পড়েছিলেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত