নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জুলাই, ২০২২ ০৯:৩৭

জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগ মোকাবিলায় বনাঞ্চল বাড়াতে হবে: ড. দীপেন

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও নাসার সাবেক গবেষক ড. দীপেন ভট্টাচার্য জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগ মোকাবিলায় বনাঞ্চল বাড়ানোর তাগাদা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এমনটি যদি হয় তবে আদৌ জীবন ধারণ সম্ভব হবে কিনা তা বলা দুরূহ। এবার মৌসুমি বায়ু ভারত অঞ্চলে নিচে থাকায় আসাম, মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এ কারণে সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের সহজ কোন উপায় নেই। বৃক্ষরোপন ও বনায়নের মাধ্যমে উষ্ণতা কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। তা না হলে অতি গরমে হতাহত প্রত‍্যক্ষ করা ছাড়া কোনো বিকল্প সামনে নেই। যে দুর্যোগের নাম হতে পারে কিলিং হিট।

সোমবার (২৫ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের যৌথ উদ্যোগে 'বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণ প্রবাহ' শীর্ষক একক বক্তৃতায় ড. দীপেন এ কথা বলেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বিল্ডিং এ-এর ১২৯ নম্বর গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা সিলেটের সহসভাপতি ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. নাজিয়া চৌধুরী।

বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিমের সূচনা বক্তব্যের পর ড. দীপেন ভট্টাচার্যের জীবন ও কর্মের উপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিল।

ডক্টর দীপেন ভট্টাচার্য জ্যোতির্বিদ, অধ্যাপক ও লেখক। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে পিএইচডি করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যারিল্যান্ড-এ নাসার (NASA) গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইনস্টিটিউটের গবেষক ছিলেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে (ইউসিআর) গামা রশ্মি জ্যোতি জ্যোতিঃপদার্থবিদ হিসেবে যোগ দেন। মহাশূন্য থেকে আসা গামা-রশ্মি পর্যবেক্ষণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে বায়ুমণ্ডলের ওপরে বেলুনবাহিত দূরবীন ওঠানোর অভিযানসমূহে যুক্ত ছিলেন।

বর্তমানে পদার্থবিদ্যায় গবেষণা করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড কমিউনিটি কলেজে; এছাড়া পদার্থবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে অধ্যাপনা করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার মোরেনো ভ্যালি কলেজে। ‘অনুসন্ধিৎসু চক্র’ নামে একটি বিজ্ঞান সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও পরিবেশ আন্দোলনে যুক্ত আছেন।

পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা ছাড়াও বাংলা ভাষায় তার বিজ্ঞান-কল্পকাহিনিভিত্তিক ভিন্ন স্বাদের বেশ কয়েকটি ফিকশন বই প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য মৌলিক বিজ্ঞান কল্পকাহিনীঃ ‘অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো’, ‘দিতার ঘড়ি’, 'নক্ষত্রের ঝড়’, 'নিওলিথ স্বপ্ন' ইত্যাদি।

জলবায়ু পরবর্তনে বিশ্বব‍্যাপী সমস‍্যা তার গবেষণা সমৃদ্ধ একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। এরপর উপস্থিতিদের মধ‍্য থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

ডক্টর দীপেন সাম্প্রতিক বন‍্যা পরবর্তী সমস‍্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সিলেট অঞ্চলের হাওর এখন দুটো শ্রেণি ধারণ করে আছে। এরমধ‍্যে এক শ্রেণির হাওরে মাটি নিচু হচ্ছে। সেখানে পানি একটি বড় সমস‍্যা। আবার আরেক শ্রেণিতে উষ্ণতা সমস‍্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে।

অতি গরম ও অতি বৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখার আহবান জানিয়ে এই বিজ্ঞানী বলেন, ভারী বা একটানা বৃষ্টি ও উষ্ণতা দেখেছি এই এক মৌসুমে আমরা দেখেছি। এসব মোকাবিলার কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

একক বক্তৃতার পর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাপা সিলেটের সহসভাপতি নাজিয়া চৌধুরী ও জামিল আহমেদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় নাজিয়া চৌধুরী বলেন, গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান স্লোগানটি এখন বদলাতে হবে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবলা করতে হবে বনজ সম্পদ বাড়িয়ে। তাই আমাদের বলতে হবে, গাছ লাগান-প্রজন্ম বাঁচান।

প্রায় পৌঁণে দুই ঘন্টাব‍্যাপী অনুষ্ঠানে শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ এফ এম জাকারিয়া, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পঙ্কজ কুমার দাস-সহ শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বাপা সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদী, বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. ফজল খান উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত