সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ মার্চ, ২০২৩ ০০:১০

সিলেটে আন্তর্জাতিক বন দিবস পালিত

সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, মূলত মানুষকে গাছের গুরুত্ব বোঝাতেই আন্তর্জাতিক বন দিবসটি পালিত হয়। এর মধ্যে বৃক্ষরোপণও অন্তর্ভুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি বিপদ থেকে রক্ষা করতে বনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গাছ থাকলে নিরাপদ থাকবে পরিবেশ। অক্সিজেন বৃদ্ধির পাশাপাশি সবুজ বন পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় রাখে। বর্তমান সরকার বন সংরক্ষণ নিয়ে অনেক বেশি কাজ করছেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সংরক্ষিত সব ধরনের বন থেকে যে ফেইলিং সেটা বন্ধের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন শুধু আমাদের অক্সিজেনই সরবরাহ করে না, মানুষ, প্রাণী, পোকামাকড়, বন্য প্রাণীকে আশ্রয় দেয় এবং কার্বনডাই-অক্সাইড শোষণ করে ও আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা করে। পৃথিবীতে জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে, অক্সিজেন সরবরাহ করতে, পর্যটনশিল্প বিকাশে ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে গাছপালা অর্থাৎ বনভূমি। তাই প্রত্যেকেরই উচিত নিজ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে বেশি বেশি গাছ লাগানো।

জেলা প্রশাসক ২১ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক বন দিবস উপলক্ষে সিলেট বন বিভাগ এর উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। “সুস্থ শরীর সুস্থ মন, যদি থাকে সমৃদ্ধ বন” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সিলেটে আন্তর্জাতিক বন দিবস পালিত হয়েছে।
সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকবর্তা মোঃ তৌফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহফুজা আক্তার। মূল প্রবন্ধ প্রেজেন্টেশন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড এন্ডভায়রনম্যান্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. ফারজানা রায়হান। বক্তব্য রাখেন রাতারগুল সোয়ার্ম ফরেস্ট সহ-ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম, স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় উদ্যান খাদিমনগর সহ-ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ফরেস্ট বিভাগের কর্মকর্তারা, উপকারভোগী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক উপকারভোগী হবিগঞ্জে চুনারুঘাট উপজেলার কালিনগর গ্রামের মাসুক মিয়া, ডেউয়ারতলী গ্রামের মাহমুদুর রহমান ও মোঃ মোর্শেদ মিয়া প্রত্যেককে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৯ টাকা করে এবং সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা মোঃ আব্দুল ওহাব, অমর বিশ্বাস ও শেখ ফয়জুর রহমান ফজর প্রত্যেককে ২৫ হাজার ৯৭২ টাকা করে লভ্যাংশের টাকা প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আজ ২১ মার্চ। বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বন দিবস। এক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন, যদি থাকে সমৃদ্ধ বন’। দিবসটি উদযাপন করা হয় মূলত বন ও জঙ্গলযুক্ত এলাকা রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনগণকে বন, বনজ দ্রব্য ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য। অন্য অর্থে দিনটি জীবনের জন্য গাছের গুরুত্বের একটি অনুস্মারক হতে চায়। কারণ, গাছ বা বৃক্ষ বিশুদ্ধ বাতাসের একটি উৎস এবং মানুষের জন্য নানা রকম ফল ও উপকরণ সরবরাহ করে।

বক্তারা বলেন, গাছপালা বা জঙ্গল রয়েছে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশে। ওই সব বন ও জঙ্গলে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ এবং ২ হাজারের বেশি আদিবাসী তাদের সংস্কৃতিসহ জীবিকা, ওষুধ, জ্বালানি, খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে। একটি বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ গাছ থাকে। একজন মানুষের শ্বাস নিতে বছরে ৭৪০ কেজি অক্সিজেন প্রয়োজন। গড়ে একটি গাছ বছরে ১০০ কেজি পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়। ফলে মানুষের বেঁচে থাকা আর পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা একা হাতেই সামলায় বনাঞ্চল।
উল্লেখ্য, বন ও বনভূমির নিরাপত্তা রক্ষার্থে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত