মাধবপুর প্রতিনিধি

২৮ মে, ২০২৩ ১৯:২৮

মাধবপুরে ৪ শিশুকে হাত বেঁধে নির্যাতন, পরিবারের দাবি উদ্দেশ্য ছিল পাচার

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার ১নং ধর্মঘর ইউনিয়নের বৈষ্ণটব পুর গ্রামে বাক প্রতিবন্ধীর নাবালক শিশুসহ ৪ শিশুকে হাত বেঁধে সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে আটকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।

গত (২৭ মে) শনিবার সন্ধ্যায় ইউনিয়নের বৈষ্ণটবপুর গ্রামের আসাদ আলী পীর সাহেবের বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

ভুক্তভোগী শিশুর মামা শামীম মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি কালিরবাজার আমার নিজের দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ আমার প্রতিবন্ধী বোন দৌড়ে এসে আমাকে বলে তার ছেলেদেরকে ধরে নিয়ে গেছে। পরে আমি দোকান থেকে মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি বৈষ্ণটবপুর গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে আক্তার মিয়া (৩৫), মুক্তার মিয়া (৩২), জসিম মিয়া (২৮), ওয়াসিম মিয়াসহ (১৮) আরও বেশ কয়েকজন আমার প্রতিবন্ধী বোনের দুই ছেলেসহ একই গ্রামের আরও দুই শিশুর হাতে রশি দিয়ে বেঁধে সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে আটক করে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, তাদেরকে কেন বেঁধে রেখেছে জিজ্ঞেসসা ও এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে আক্তারসহ উপস্থিত সকলে আমার উপর হামলা করে এবং মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও মুছে ফেলতে বাধ্য করে।

তিনি জানান, আমার ভুক্তভোগী ভাগিনা আমাকে জানায় তাদেরকে মজা ও খেলনা কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভারত নিয়ে যাবে বলে তাদেরকে গাড়িতে তুলে ফেলে। পরে তারা যেতে না চাইলে হাতে বেঁধে সিএনজি অটোরিকশাতে আটক করে রাখে। পরে আমি বাসায় ফিরে মোবাইল ব্যাকআপ দিয়ে ভিডিও ও ছবিগুলো ফেরত পাই।

সাংবাদিকের হাতে পৌছা ঘটনার ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, চারজন শিশুকে হাতে রশি দিয়ে বেধে সিএনজি অটোরিলশার সঙ্গে আটক করে রাখা হয়েছে। এক ভিডিওচিত্রে ভুক্তভোগী শিশু বলে, বিকাল বেলা রাস্তায় হাঁটতে ছিলাম তখন আক্তার মিয়া আমাদেরকে ইন্ডিয়া থেকে খেলনা ও মজা দেবে বলে সিএনজি অটোরিকশাতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদ আলী সর্দার জানান, বাক প্রতিবন্ধী দম্পতির শিশু ছেলেগুলো আক্তারের সিএনজির স্টিয়ারিংয়ের তার ছিঁড়ে ফেলায় তাদেরকে হাতে রশি দিয়ে বেঁধে আটক করা হয়। পরে আমি এসে বাক প্রতিবন্ধী পরিবারকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করি। ছেলেগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিই।

এই বিষয়ে মাধবপুর সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। মাধবপুর থানায় এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে এবং শিশুদের প্রাথমিক কোন চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে অবগত করা হয়েছে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য। শিশুরা যাতে করে পরবর্তীতে কোন প্রকার ঝামেলায় না পড়ে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি।

এই বিষয়ে কাশিমনগর ফাঁড়ির ইনচার্জ আরিফ হোসেন জানান, শিশুগুলো আক্তার মিয়ার সিএনজি অটোরিকশা নষ্ট করায় তাদেরকে হাতে বেঁধে সিএনজিতে আটক করে রাখে যা একটি অপরাধ। ঘটনার পরেই আক্তার পলাতক আমরা অপরাধীকে গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে এখনো কেউ লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মাধবপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘটনাস্থলে কাশিমনগর ফাঁড়ির ইনচার্জকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত