২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ১৯:৩৮
বিজ্ঞানলেখক অভিজিৎ রায় হত্যার বিচার সম্পন্ন হলেও এখনো খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
অভিজিৎ রায় হত্যার নয় বছর পূর্তিতে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অভিজিৎ স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অভিজিৎ হত্যার নয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতা দেশকে আরও পিছিয়ে দেবে।
তারা বলেন, অভিজিৎ রায় একটি বিজ্ঞানমনস্ক, উদার ও যুক্তিবাদী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে লেখালেখি করেছেন। এ কারণে তাকে প্রাণও দিতে হয়েছে। অভিজিৎসহ কয়েকজন যুক্তিবাদী লেখককে হত্যা এবং সরকারের আপোষের কারণে এখন মৌলবাদী গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দেশে এখন একটি ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষজন কথা বলতেও ভয় পায়। লেখকরা স্বাধীনভাবে লেখালেখি করতে পারেন না।
এসময় অভিজিতের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ও আলোক প্রজ্বলনের মাধ্যমে খুন হওয়া এই লেখককে স্মরণ করা হয়।
অভিজিৎ স্মরণ কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন স্থপতি রাজন দাস, প্রাবন্ধিক ও লেখক এনামুল হক, পরিবেশকর্মী আশরাফুল কবীর, হযরত বিনয় ভদ্র, দেব্যজ্যোতি দেবু, অরূপ বাউল, লেখক সামসুল আমিন, মাহবুব রাসেল, রিপন চৌধুরী, মেকদাদ মেঘ, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান প্রান্তিক, কবি মিসবাহ জামিল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন। হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিহতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছয় আসামির মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস), আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। আরেক আসামি উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী ‘হত্যার প্ররোচনা’ দেওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।
অভিজিৎ রায়ের জন্ম ১৯৭১ সালে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অভিজিৎ রায়ের গর্ভবতী মা শেফালি রায়কে ভারতের আসামে রেখে বাবা অজয় রায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীনের চারদিন আগে আসামের শিবনগরের নাজিরা ম্যাটারনিটি সেন্টারে ১২ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন অভিজিৎ। তার পিতা একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. অজয় রায়।
উদয়ন স্কুল থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাস করেন অভিজিৎ। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে এইচএসসি পাস করার পরে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে তার উচ্চশিক্ষার শুরু। বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি করেছিলেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে।
অভিজিৎ রায় ব্লগ, ফেসবুক, ম্যাগাজিন এবং দৈনিক পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশিত তার বইগুলো হল- আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫), মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে (২০০৭), স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি (২০০৮), সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০), অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১), বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (২০১২), ভালবাসা কারে কয় (২০১২) ,শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪), ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে (২০১৫)।
আপনার মন্তব্য