সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ মার্চ, ২০২৪ ০৩:০৬

দিরাইয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত অন্তত ২০

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

শনিবার বিকালে উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) একরার হোসেন সম্প্রতি হাতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ নিয়ে একরার হোসেন ও তার সমর্থকদের সঙ্গে গ্রামবাসী ও স্কুল শিক্ষকদের বিরোধ চলছে। এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট শিক্ষা বোর্ড তদন্ত করে অনিয়মের অভিযোগে ওই কমিটি বাতিল করে দেয়। এতে ওই স্কুলের শিক্ষক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে একবারে দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়।

২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর সিলেট শিক্ষা বোর্ডে কমিটি বাতিলের কাগজ নিয়ে আসার পথে বোর্ড প্রাঙ্গণে চেয়ারম্যানের লোকজন শিক্ষকের ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় অভিযোগ করেন ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন।

সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শামীম আহমদ জোরপূর্বক স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রতীকী সংবাদ সম্মেলন করে সামাজিক মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মো. আনিস আহমদের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য রাখেন। এ ঘটনায় আনিসুর রহমান সিলেটে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

গত ৯ মার্চ শিক্ষক আনিস আহমদের উপর হামলা হয়। তিনি গুরুতর আহত হয়ে সিলেটে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

এদিকে, শিক্ষকের উপর হামলার প্রতিবাদে স্কুলে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করার সময় ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থক রাজীব হোসেন বন্দুক নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

শিক্ষককে পিটিয়ে আহত ও এলাকার অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় দিরাই থানা মামলা নেয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে। পরে গত ১৩ মার্চ তারা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

গত ২৯ মার্চ জুমার নামাজের সময় একরার হোসেনের চাচাত ভাই ফজলু মিয়ার সঙ্গে গ্রামের প্রতিপক্ষের তর্কাতর্কি এবং মাগরিবের নামাজের সময়ও তার ভাতিজার সঙ্গে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়।

এর জেরে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার সময় একরার হোসেনের লোকজন ও গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় একরারের ভাই ও ভাতিজারা বন্দুকের গুলি ছুড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিপক্ষের রফু মিয়া, এওয়ার মিয়া, সমসু মিয়াসহ ৪-৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একরার হোসেনের পক্ষে রাজিব হোসেন, সেবুল, সুবাসসহ আরো কয়েকজন ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন। তারা সিলেট ও জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে একরার হোসেন বলেন, আমি প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী হওয়ায় তারা সবাই আমার পেছনে লেগেছে। শিক্ষকদের তারা উসকে দিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের সময় তার সমর্থক রাজীব হোসেন স্কুলে অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে স্বীকার করলেও তিনি বলেন, “এটি প্রকৃত অস্ত্র নয় ‘কাঠের অস্ত্র’।”

শনিবার তার ভাই ও স্বজনদের বন্দুক নিয়ে হামলায় অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এগুলো অস্ত্র নয় পাইপ।”

তার বাড়িতে এসে সোহেল মেম্বারের লোকজন হামলা করলে তারা আত্মরক্ষায় সংঘর্ষে জড়ায় বলে দাবি করেন তিনি।

দিরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ বলেন, “অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেব।”

বন্দুকের ছররা গুলিতে ৩-৪ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

দিরাই সার্কেল এএসপি মো. শহিদুল হক মুন্সি বলেন, “একজন শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ নিয়ে আসেনি।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত