সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৩৪

হাওরে এক নলকূপে অনবরত পড়ছে পানি, আরেকটিতে জ্বলে আগুন

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার একটি গ্যাসক্ষেত্রের পাশের হাওরের দুটো নলকূপ থেকে চাপ ছাড়াই দিন–রাত পানি বের হচ্ছে। নলকূপের ওপর দিয়ে বাতাসের সঙ্গে বের হচ্ছে গ্যাস। দেশলাই জ্বালালে জ্বলছে আগুনও।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের দুধারকান্দি এলাকায় নলকূপ দুটির অবস্থান। একটি এক বছর আগে এবং অন্যটি সম্প্রতি বসানো হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার পাশেই সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ২৫৯ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২০০৯-১০ সালে দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা গ্যাসক্ষেত্র (সুনেত্র) চিহ্নিত হয়।

জামালগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে হালির হাওরের দুধারকান্দি এলাকার দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। নলকূপ দুটি হাওরের একেবারে মধ্যবর্তী দুর্গম এলাকায়, আশপাশে গ্রাম নেই। বৈশাখ মাসে হাওরের বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য হাওরপারের বাসিন্দারা অস্থায়ী নিবাস গড়েন। স্থানীয়ভাবে এটাকে ‘জিরাতি’ বলে। ফসল তোলার পর এসব অস্থায়ী ঘর ভেঙে ফেলা হয়। ওই সময় বিশুদ্ধ পানির জন্য ওই নলকূপ বসানো হয়।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এবং বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনকে (পেট্রোবাংলা) জানানো হয়েছে। এ–সংক্রান্ত কারিগরি দল সরেজমিনে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাওরের উঁচু অংশে একদিকে একটা অগভীর নলকূপ। সেখান থেকে উত্তরে ৩০০ ফুট দূরে আরেকটি গভীর নলকূপ। দুটি থেকেই অনবরত পানি পড়ছে। অগভীর নলকূপটি গত বছর বসানো হয়। গভীর নলকূপটি বসানো হয়েছে ১৫ দিন আগে। পুরোনো নলকূপে আগে থেকে পানি পড়লেও দুর্গম হাওরে হওয়ায় বিষয়টি জানাজানি হয়নি। গভীর নলকূপটি বসানোর পর চাপ ছাড়াই পানি বের হতে থাকে। নলকূপের মাথায় আগুন দিলে বাতাসে আগুন ধরে যায়। এক কৃষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

হাওরপারের জারাকোনা গ্রামের কৃষক মো. আলী আকবর বলেন, তিনি গত বছর প্রথম সেখানে নলকূপ বসান। তিন শ ফুট পাইপ বসানোর পর পানি ওঠে। গত বছর হাওরের ধান তুলে সবাই যার যার গ্রামে চলে যান। এবার এসে দেখেন, পানি বের হচ্ছে। এবার এক কৃষক খেয়াল করেন, পানি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নলকূপের ওপরের অংশ দিয়ে বাতাস বের হচ্ছে। বাতাসে আগুন দিলে আগুন ধরে যায়। এরপর পাশেই গভীর নলকূপটি বসান আরেক কৃষক। এটিতে আরও বেশি পানি আসতে থাকে। পরে ওই কৃষক পাইপের ওপরের অংশে পাকা বাক্সের মতো করে দিয়েছেন, যাতে পানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যায়।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন আহমদ হোসেন বলেন, নলকূপগুলোর পানি পরীক্ষা করে পান করা উচিত। পানিতে বিষাক্ত ধাতু থাকতে পারে। এ পানি পান করলে ক্ষতি হবে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বোঝা না-ও যেতে পারে।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা সরেজমিনে দুজন কর্মকর্তা পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মাটির চাপেও এমনটা হতে পারে। আবার নিচে পকেট গ্যাসও থাকতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে কারিগরি পরীক্ষা লাগবে। এ জন্য পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাপেক্সকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখন তারা উদ্যোগ নিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো স্থানীয় প্রশাসনের চিঠি পাইনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দেখেছি। প্রশাসনের চিঠি পেলে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত