তাহিরপুর প্রতিনিধি

২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:৩৭

ধান গোলায় তোলায় ব্যস্ত কৃষক, শ্রমিক সংকটে বিপাকে

পুরো দমে ধান কাটা শুরু হয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ছোট বড় ২৩টি হাওরে। বাতাসে নতুন ধানের গন্ধে চারদিকে এক ভিন্ন রকম পরিবেশ বিরাজ করছে। হাওরের যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই এখন কৃষকের শ্রমে ঘামে জমিতে ফলানো সোনার ধান গোলায় তোলার উৎসব। কিন্তু শ্রমিক সংকট রয়েছে আর ধান কাটার মেশিনের হাওরে পানি থাকার কারনে ধান কাটতে পারছে না। কৃষক ও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে তারাই ধান কাটছেন।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনের আনন্দে নতুন বছরে নতুন আশায় পরিবার পরিজন নিয়ে ধান কাটা,মাড়াই আর শুকানো শুরু করেছেন তারা। ভাল ফলনে কিষান কিষানির নির্মল হাসিতে চোখে মুখে আগামী দিন গুলো আনন্দে কাটানোর তৃপ্তির হাসি।

প্রতি বছরই হাওরে শ্রমিক প্রকট আকার ধারন করছে। তাই বৈশাখে গ্রামের বাইরে থাকা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা করতে। কারন এই ধানের উপর নির্ভর করে তাদের পুরো বছরের খরচ,ছেলে মেয়ে লেখা পড়া, বিয়ে শাদিসহ নানান খরচ। এই ধান তুলতে পারলেই তারা ধনী। আর এই ধানে কোনো কারনে ক্ষতি গ্রস্থ হলে অভাব জড়িয়ে সীমাহীন কষ্টের শেষ থাকে না।

কৃষি বিভাগের জানিয়েছেন, কিছু দিন পূর্বেও ঝড়বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় সোনার ফসল হারানোর আতংক কেটে গেছে রৌদ্রময় আবহাওয়ায়। সকাল থেকেই হাওরে পাকা সোনালী ধান কেটে খলায় এনে মাড়াই করতে ব্যস্থ সময় পার করছে কৃষক। এবার ধানের ফলন ভাল হয়েছে আর নির্বিঘ্নে হাওরের ফসল গোলায় তুলতে পারবে। আর অনেকেই পাকা ধান কেটে মাড়াই ও শুকানোর কাজ শেষ করে গোলায় তুলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরেই কৃষকরা তাদের কষ্টে ফলানো ধান গোলায় তুলতে পারেন এমন টা হয় না। ২০১৭ সালের হাওর বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়। কোনো ভাবেই ফসল রক্ষা করা যায় নি বাঁধ ভেঙে পানিতে হাওর ডুবে যাওয়ায় সে বছর হাওর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল কৃষকদের। ২০২২ সালে বছর অন্তত ২০টি হাওরে ফসলহানি হয়েছিল। ২০২৩সালে নির্বিঘ্নে ধান গোলায় তুলেছেন কৃষকরা।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ে কৃষক শফিক মিয়া সহ কৃষকগন জানান, এই সময়টায় সুনামগঞ্জ জেলার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। আর উজানে ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নেমে আগাম বন্যা দেখা দেয় জেলার হাওরে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে কিংবা বাঁধ উপচে হাওরের ফসল তলিয়ে ফেলে। তবে এখনও পর্যন্ত পাহাড়ী ঢলের পানি আসেনি। তবে নিন্ম মানের বাঁধের কারনে আতংকে আছি কখন জানি পাহাড়ী ঢলে আসে আর বাঁধ ভেঙে ফসলহানীর ঘটনা ঘটে।

মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক সাদেক আলীসহ অনেকেই বলেন,হাওরে ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিক আগে আসলেও এখন একবারে কমে গেছে। এদিকে স্থানীয় ভাবেও শ্রমিক মেলে না। তাই এখন ধান কাটার যন্ত্রের ওপরই ভরসা। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিক নেই আর হাওরেও ধান কাটার মেশিন হাওরের ভিতরে যেতে পারছে না পানি থাকায়ও ফলে পাকা ধান হাওর থেকে কেটে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

তাহিরপুর উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপ্রকৌশলী মনির আহমেদ জানান,আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে বিস্তীর্ণ হাওরের ফসল রক্ষায় উপজেলায় ৮১পিআইসি ১০৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ,সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে বরাদ্দ ১৪কোটি ৪৩লক্ষ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হাসান উদ দৌলা বলেন,উপজেলায় হাওরে চলতি মৌসুমে ১৭হাজার ৪৪৫হেক্টর জমিতে ইরি-বোর ধান চাষ করা হয়েছে। এতে ৮০হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার মূল্য ২শ ৪৪কোটি ৮০লাখ টাকার বেশী। হাওরে ধান কাটার মেশিনের কোনো সংকট নেই। হাওরে বৃষ্টির পানি থাকায় মেশিন হাওরের নিচের দিকে নামতে পারছে না, যার জন্য পাকা ধান কাটতেও পারছে না। ধান কাটার মেশিন প্রর্যাপ্ত রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান,কৃষকের কষ্টে ফলানো সোনার ফসল হাওর থেকে কেটে মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছে হাওর পাড়ের কৃষক ও তাদের পরিবার। আশা করছি এবার কৃষকগন তাদের ফসল নির্বিঘ্নে গোলায় তুলতে পারবে আর তার জন্য সব কিছু করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত