
১৪ জুলাই, ২০২৪ ০১:০৭
প্রতীকী ছবি
প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। গ্রাহকরা এখন ঘরে বসেই ব্যাংকের অ্যাপসের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা নিতে পারছেন। জানতে পারছেন নিজ একাউন্টের ব্যালেন্সসহ জরুরি সব তথ্য। সকল লেনদেনের পাশাপাশি ব্যাংকে না গিয়ে অ্যাপস কিংবা এটিএম কার্ড থেকেই টাকা ট্রান্সফার করতে পারছেন অন্য যে কারো অ্যাকাউন্টে।
প্রযুক্তি উন্নত হলেও কিছুদিন পরপরই ইসলামী ব্যাংক পিএলসি সিলেটের বিশ্বনাথ শাখার গ্রাহকরা শিকার হচ্ছেন ডিজিটাল প্রতারণার। নিজ নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা খুইয়ে দিশেহারা তারা।
এরই মধ্যে মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো লাখ টাকা খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছেন ছানারুন আলী নামের সত্তরোর্ধ এক নারী। একইভাবে অনেক গ্রাহকরাই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। খোয়া টাকা ফিরে পেতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। কিন্তু তারপরও সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বিশ্বনাথ পৌর শহরে ২২টিরও বেশি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এরমধ্যে কেবল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা বারবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এতে ব্যাংকের কোন না কোন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। তারা সহজ সরল গ্রাহকদের সকল তথ্য হ্যাকারদের কাছে পাচার করছেন। অভিযোগ কিংবা জিডি করা হলে থানা পুলিশও অপরাধীদের ধরতে মাঠে নামে। এবারও নেমেছে। কিন্তু তার পরও থামছে না প্রতারণা, ধরা পড়ছে না অপরাধীরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ৩/৪বছর আগে থেকে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন বিশ্বনাথ ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা। আর সেলফিন অ্যাপস ব্যবহার করে সম্প্রতি প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরও অনেকে। আইনি জটিলতা ও হয়রানি এড়াতে তাদের অনেকেই পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না। আবার প্রতারিত অনেকেই মামলা করতে চান, কিন্তু পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বলে। আবার অনেকেই কেবল থানায় সাধারণ ডায়েরিই করেন। আর জিডির সূত্র ধরেই প্রতারকদের চিহ্নিত করতে মাঠে নামে পুলিশ। কিন্তু কিছুদিন পর তদন্তই আটকে যায়। পরবর্তীতে কী হয় তাও জানেন না গ্রাহকরা।
পুলিশ ও গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই অ্যাপস ব্যবহার করে প্রতারিত হয়েছেন মনোয়ার হোসেন নামের বিশ্বনাথ পুরান বাজারের এক ব্যবসায়ী। তিনি পৌর শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা ও ‘মনোয়ার ডিজিটাল আর্ট’র সত্ত্বাধিকারী। ওইদিন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ০১৭৬১-১২৭৬২১ নম্বার থেকে তার ব্যবহৃত ০১৭১১-****৮৪ নম্বারের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। এ সময় তিনি রিসিভ করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ইসলামী ব্যাংকের অফিসার পরিচয় দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেটের কথা বলেন। এরপর তথ্য দিয়ে তিনি সহযোগিতা করেন এবং একপর্যায়ে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ওই অজ্ঞাতনামা প্রতারক। এ ঘটনায় গত ৭ জুলাই তিনি বিশ্বনাথ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন; (জিডি নং ২৭৭)।
এর প্রায় আড়াই মাস আগে গত ২৪ এপ্রিল একইভাবে সেলফিন অ্যাপস ব্যবহার করে প্রতারণার শিকার হন ছানারুন আলী নামের সত্তরোর্ধ এক নারী। তিনি পৌর শহরের চান্দশিরকাপন গ্রামের ক্ষুদ্র গরু ব্যবসায়ী ফুলকাছ আলীর স্ত্রী। দীর্ঘদিন থেকে তার স্বামী আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে ধার নিয়ে গরু ব্যবসা করে আসছেন। সম্প্রতি বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য স্বজনদের নিকট থেকে ১ লাখ টাকা নিজ অ্যাকাউন্টে জমা করেন। ২৪ এপ্রিল দুপুরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি +৮৮০৯৬৯৭১৩৯৭৩৮ নম্বার থেকে ওই নারীর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে কল করেন। এসময় রিসিভ করার পর ব্যাংকের অফিসার পরিচয় বিভিন্ন তথ্য জানতে চান এবং এক পর্যায়ে তার অ্যাকাউন্ট থেকে বিয়ের জন্য জমানো ওই ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অজ্ঞাত প্রতারক। এ ঘটনার পরদিন ২৫ এপ্রিল তিনি বিশ্বনাথ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন, (জিডি নং-১০০৮)।
এর প্রায় দুই বছর আগে উপজেলার দেওকলস এলাকার তিশা বেগম নামের এক গ্রাহকও প্রতারণার শিকার হন। একই পদ্ধতিতে তার অ্যাকাউন্ট থেকেও ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক চক্র।
গ্রাহক ছানারুন আলী ও মনোয়ার হোসেনের অভিযোগ, সেলফিন অ্যাপস ব্যবহার করে এই ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। তাদের অভিযোগ, ব্যাংকের কোন না কোন কর্মকর্তা তারাসহ ব্যাকের প্রতারিত গ্রাহকদের তথ্যগুলো হ্যাকারদের কাছে পাচার করছেন। যে কারণে শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংকের বেশ কিছু গ্রাহক প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সহযোগিতাও করছেন না বলেও অভিযোগ তাদের।
তবে, এতে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা জড়িত নন এবং কর্মকর্তাদেরও কোন দায় নেই বলে দাবি করেছেন ইসলামী ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মুহিব উল্লাহ ভূঁইয়া। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা সম্পূর্ণ গ্রাহকদের দায়। কারণ তারা হ্যাকারদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। এধরনের ঘটনা সারা দেশেই ঘটছে। এজন্য গ্রাহকদের সচেতন করতে তারা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। ব্যাংকের দেয়ালে দেয়ালেও সতর্কবার্তা সাঁটিয়ে রেখেছেন।
প্রতারণা ঠেকাতে সচেতনতা ছাড়া বিকল্প কোন পন্থা নেই বলেও জানান তিনি।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, একজন নয়, ওই ব্যাংকের বেশ কয়েকজন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এতে কেউ কেউ জিডিও করেছেন। জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশও মাঠে কাজ করছে। তবে ওই প্রতারকদের চিহ্নিত করা বা ধরা এটা খুবই কঠিন। তবুও পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আপনার মন্তব্য