এস আলম সুমন, কুলাউড়া

২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১২:৪৬

কুলাউড়ার লংলা বাগানের সিমেট্রিগুলো অরক্ষিত

চুরি হচ্ছে মূল্যবান পাথর

কুলাউড়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত টিলাগাঁও ইউনিয়নের ডানকান ব্রাদার্সের লংলা চা বাগানের রাবার বাগান এলাকায় রয়েছে লংলা সিমেট্রি। এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন দেশের চা শিল্পের বিকাশে মূল্যবান অবদান রাখা খৃস্টান সম্প্রদায়ের বিদেশি ট্রি প্লান্টার ও তাদের স্বজনরা। চুরি হচ্ছে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা সিমেট্রিগুলোর মূল্যবান পাথর। অথচ এই সিমেট্রি হতে পারে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।

জানা যায়, ১৮৫৭ সালে মালনীছড়া চা বাগান স্থাপনের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এর ঠিক ২৩ বছর পর ১৮৮০ সালে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্রিটিশরা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষাবাদ শুরু করে। এ সময় ব্রিটেন থেকে নিয়ে আসা হয় অভিজ্ঞ ‘টি প্ল্যানটার’ দের। ১৮৮৫ সাল ও তৎপরবর্তী সময়ে উপমহাদেশ ব্রিটেনের দখলে থাকাবস্থায় যেসব ব্রিটিশ ‘টি প্ল্যান্টার’ বিভিন্ন কারণে মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে ২৮ জনকে সমাহিত করা হয় লংলা চা বাগানের এই সিমেট্রিতে। অনেকগুলোতেই নেই শায়িতদের পরিচিতি। অনেকটির মূল্যবান শ্বেত পাথর ও কবর ভেঙে ফেলা হয়েছে। নেই কোনও  সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পাহারাদার ও প্রাচীর। যারা তাদের জীবন দিয়ে ও নিজের জন্ম ভিটে-মাটির মায়া ত্যাগ করে চা উৎপাদনে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন তাদের কবরগুলোও সংরক্ষণের নেই কোনও উদ্যোগ। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ রয়েছেন উদাসীন। এখনো অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে অজুহাত দেখিয়ে কোন মন্তব্য করেননি এ বাগানে কর্মরত এক কর্মকর্তা।

লংলা চা বাগান ঘুরতে আসা পর্যটক আব্দুল আহাদ, সায়েম আহমদ, শরীফ আহমদ ও সৈয়দ আতিকুজ্জামান বলেন, চা বাগান সৃজনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন ও স্বদেশের মায়া ত্যাগ করে এখানে শায়িত আছেন তাদের কবরকে এভাবে অযতœ-অবহেলায় ফেলে রাখা ঠিক হয়নি। পূর্বে এটার একটা জৌলুস ছিল যা বর্তমানে আর নেই। এগুলোকে সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজর ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, লংলা চা বাগানে অবস্থিত খৃস্টানদের কবরগুলো একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এখানে ১৯৫৮ খৃস্টাব্দ থেকে দীর্ঘদিনের কালের সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাসের দর্পণ এই সিমেট্রি। আগে এগুলোর যত্ন ও ফুলের বাগান থাকলেও ইদানিং সংরক্ষণের অভাবে অনেকগুলো শ্বেত পাথরের কারুকার্যময় এপিটাফগুলো নষ্ট যা দুর্বৃত্তরা খুলে নিয়ে গেছে। কারণ অনেকেই মনে করে খৃস্টান সম্প্রদায়ের লোক মরার পর তাদের ব্যবহৃত মূল্যবান সম্পদ তাদের সাথে দিয়ে কবরস্ত করা হয়। সেজন্য ওইগুলো চুরির জন্য নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। বাগান কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নজর দেয়া উচিত।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনি উদ্যোগ নিয়ে এগুলো সংস্কার এবং এখানে শায়িতদের পরিচিতি তাদের নিজ নিজ কবরে লাগিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত