নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ মার্চ, ২০১৬ ১৭:৫৭

তারাপুর চা বাগান : উচ্ছেদ হচ্ছে ৩৩৭ প্লটও

দখলকৃত দেবোত্তোর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ৩৩৭ প্লটও উচ্ছেদ করতে হবে। রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি এসব স্থাপনাও বাগান থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সম্প্রতি উচ্চ আদালত এই চা বাগানের সকল স্থাপনা ৬ মাসের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এসব প্লটের বাসিন্দাদের সকলেই বাগানটির দখলদার রাগীব আলীর কাছ থেক প্লট ক্রয় করেছিলেন।

জানা যায়, রাগীব আলী তারপুর চা দখলের পর বাগান ধ্বংস করে গড়েছিলেন বহুতল ভবন, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার, ছাত্রাবাস। বিক্রি করেছিলেন প্লট। এসবে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন অনেকে। গড়ে তুলেছেন বাসস্থান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আদালতের রায়ের ফলে এদের সবাইকে বাগান ছাড়তে হবে।

সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন, রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই কিংবা তার পক্ষের কেউ তারাপুর চা বাগানের মালিক নন। এখানকার সব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে, গড়তে হবে চা-বাগান। এ রায়ের পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রায়ের বাস্তবায়ন দেখার আশায় রয়েছেন।

রোববার তারাপুর চা বাগানে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তাতেও উঠে আসে এ উদ্বেগ-আতংক।

২০১১ সালের সদর উপজেলা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন মতে, বিভিন্ন ব্যক্তির জমি দেখিয়ে ৭ মৌজায় তারাপুর চা-বাগানের ভূমিতে ৩৩৭টি প্লট বিক্রি করেন রাগীব আলী ও তার সহযোগীরা।

যাদের কাছ থেকে এসব জমি কেনা দেখিয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- গোপাল ঘোষ, প্রদীপ কুমার ঘোষ, গোপেষ ঘোষ, আবদুল হাই চৌধুরী, ঈশান চন্দ ঘোষ, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, আবদুল মুছব্বির, জৈতুন্নেছা, নূর-ই এলাহি, আবদুর রহমান, আবদুল লতিফ, খালিদ চৌধুরী, পঙ্কজ কুমার দত্ত, নুনু মিয়া, তারা মিয়া, লাল মিয়া, সুরুজ খান, সৈয়দ আলীর ছেলে, মমতাজ আলী, কালাই মিয়া, পুলক কবির, আতাউর, আবদুল রশিদ, ছাদ, হাফিজ আবু নসর, গউছ উদ্দিন চৌধুরী, সৈয়দ মোজাফফর আলী, শরীফ চৌধুরী, শামসুন নেছা খানম, রাধা লাল গুপ্ত, মুহিদুর রহমান, কাপ্তান মিয়া, আবদুল হাই।

জানা যায়, ৭টি মৌজার মধ্যে তারাপুর টি গার্ডেন মৌজার জেএল নং ৭৬-এ রয়েছে ২২৫টি প্লট। আঙ্গাউড়া মৌজার জেএল নং ৫২-এ রয়েছে ৭০টি প্লট। মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার জেএল নং ৯১-এ রয়েছে ১২টি প্লট। কুমারগাঁও মৌজার জেএল নং ৮০-এ রয়েছে ১০টি। ব্রাহ্মণশাসন মৌজার জেএল নং ৭৮-এ রয়েছে ১৯টি প্লট।

এভাবে জালজালিয়াতির মাধ্যমে রাগীব আলী তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদকে সেবায়েত সাজিয়ে হিন্দু মন্দিরের ২ হাজার কোটি টাকার ভূমি হাতিয়ে নেন। এসব ভূমি অপদখল নিয়ে বিভিন্ন সময় আদালতে ৫৩টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ২০০৫ সালে সদর উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম আবদুল কাদের বাদী হয়ে এ ভূমি উদ্ধারের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি উচ্চ আদালতে স্থগিত করে রাখেন রাগীব আলী।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ দেবতার সেবায়েত সেজে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার বালিদীঘির পারের আবদুল ওয়াছের পুত্র দেওয়ান মোস্তাক মজিদ রাগীব আলীর পুত্র আবদুল হাইকে চা বাগানটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, রেকর্ড পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, মন্দিরের তৎকালীন সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে ম্যানেজ করে রাগীব আলী, তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ ৭ জন মিলে এই মূল্যবান ভূসম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে একে অন্যের যোগসাজশে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র জাল করে। এতদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এ মামলাটি সচল করার নির্দেশ দেন এবং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

তবে কোতোয়ালি থানার ওসি সুহেল আহমদ জানান, রোববার পর্যন্ত তিনি ওই রায়ের কোনো কপি পাননি। পেলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উত্তর গেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঞ্জিত কুমার চৌধুরী আদালতের রায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, রায় হয়েছে, আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত