সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ এপ্রিল, ২০১৬ ১৬:৩৩

নিজ সহোদরকে মামলায় জড়িয়ে বাসা দখল ও অর্থ আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ

কমপক্ষে ১০ টি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আপন ভাইকে হয়রানী, বাসা দখল ও অর্থ আত্মসাতের অপচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নগরীর ফাজিল চিশত আবাসিক এলাকার ১৮/৬ নং বাসার বাসিন্দা আব্দুল কাদিরের পুত্র মো. শামছুল হক গতকাল শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাই মোস্তাফিজুর রহমান তার রোজগারের ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত ও তার খরিদা বাসা জবর দখলের উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে আদালত ও থানায় কমপক্ষে ১০টি মামলা করেছেন। এর প্রায় সবগুলোই তদন্তে মিথ্য প্রমাণিত হয়েছে। কয়েকটি মামলায় প্রভাব বিস্তার করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়ায় সেগুলোতে তাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে।

এছাড়া, মোস্তাফিজুর রহমান তার ভাগ্নে জুয়েল ও শ্যালক সুজনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ঐ বাসা দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই সন্ত্রাসী বাহিনী শামছুল হককে অপহরণ ও খুন করে লাশ গুমের হুমকী দিচ্ছে। এ অবস্থায় নিজের নিরাপত্তায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শামছুল হক।

লিখিত বক্তব্যে শামছুল হক জানান, তার আপন ভাই মোস্তাফিজুর রহমান যুক্তরাজ্য প্রবাসী। শামছুল হক নিজেও এক সময় যুক্তরাজ্যে ছিলেন। তাদের মূল বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের আমরিয়া গ্রামে। ১৯৯৮ সালে শামছুল, তার ভাই মোস্তাফিজ ও মোস্তাফিজের তৎকালীন স্ত্রী (পরবর্তীতে তালাকপ্রাপ্ত) রাবেয়া বেগমের নামে ফাজিলচিশত আবাসিক এলাকার ১৮/৬ নং সাকিনে মোট ১৫ শতক জমি কিনে বাসা নির্মাণ করেন। এখন পর্যন্ত ঐ বাসায় বসবাস করছেন শামছুল হক। শামছুল হক যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তার রোজগারের প্রায় ৩০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন ভাই মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। দেশে ফিরে ভাইয়ের কাছে ঐ টাকা চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন মোস্তাফিজ। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। উপরন্তু ৩ জনেরর নামে যৌথ খরিদা বাসার জায়গা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়ার জন্য চাপ দেন।

২০১২ সালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহিউদ্দিন লোকমানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্ততায় ফাজিলচিশতের বাসায় ৫ শতক ভূমি শামছুল হককে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া শামছুল হক নির্মিত বাসার মূল বাবত আরো ১০ লাখ টাকা মোস্তাফিজুর রহমান কর্তৃক শামছুল হককে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। মোস্তাফিজুর রহমানও সালিশ কমিটির লিখিত ঐ সিদ্ধান্ত মেনে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে শামছুল হকের ৩০ লাখ টাকা, বাসার মূল্য বাবত ১০ লাখ টাকা বা বাসার জায়গা হতে ৫ শতক ভূমি কোন কিছুই দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন শামছুল হক।

শামছুল হক তার লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, ঐ টাকা না দিয়ে তার আপন ভাই কৌশলে তাকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করে ও সন্ত্রাসী বাহিনীর সহায়তায় তার বাসা দখলের পথে অগ্রসর হন। এরই অংশ হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে তার ভাগ্নে জুয়েল, শ্যালক সুজনসহ এক দল সন্ত্রাসী ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তার বাসায় হামলা চালিয়ে বাসা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় শামছুল হক থানায় জিডি করেন। বাসা দখলে ব্যর্থ হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান তার বাসার কাজের মেয়েকে দিয়ে শামছুল হকের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করান, যা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

এছাড়া, মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে শামছুল হক ও তার দুই ফুফাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা দায়ের করেন, যে মামলায় এখনো আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে শামছুল হককে। মোস্তাফিজুর রহমানেরর সহযোগী তার ভাগ্নে জুয়েল তার মাকে বাদী করে শামছুল হক, তার মামা আখলুছ মিয়া ও চাচাতে ভাই সৈয়দুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করান। এছাড়া, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের আমরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মদব্বির, জাকির ও আকিবুল বাদী করে আরো ৩টি মামলা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই ৩ মামলাতেই হাজিরা দিতে দিতে জর্জরিত শামছুল হক। এছাড়া, প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমান তার শ্যালক সুজনকে বাদী করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করান শামছুল হকের বিরুদ্ধে। ঐ মামলাটি পবরর্তীতে পুলিশী তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

এভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বাসা দখলে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে তার ভাগ্নে জুয়েল এক দল সন্ত্রাসী নিয়ে শামছুল হকের ফাজিলচিশতের বাসায় গিয়ে ঐ বাসার ভাড়াটিয়াদের বাসা ছেড়ে চলে যাবার জন্য হুমকী দিয়ে আসে। পরবর্তীতে শামছুল হকের অনুপস্থিতিতে গত ১৮ এপ্রিল উক্ত জুয়েল আবারো একদল পুলিশ নিয়ে ঐ বাসায় গিয়ে বাসার ভাড়াটিয়াদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকী দিয়ে আসে।

শামছুল হক অভিযোগ করেন, একের পর এক মামলা ও হুমকীতে জর্জরিত হয়ে তিনি ইতোপূর্বে একাধিক বার বিষয়গুলো সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সিলেটের ডিআইজি ও সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছেন। থানায়ও একাধিক বার জিডি করেছেন। কিন্তু, যথাযথ আইনী সহযোগিতা না পাওয়ায় তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ অবস্থায় নিজের নিরাপত্তার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনী তথা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন শামছুল হক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত