নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ মে, ২০১৬ ০০:০৩

‘দাবি জানিয়ে কি করব, বিচার পাওয়ার আশাও করি না’

"আরও বড় বড় মানুষের ছেলেদেরও মারল, কিছুই হল না। আমি তো নিতান্ত সাধারণ একজন। আমার ছেলে হত্যার বিচার হবে এমনটা আর আশাও করিনা।"

আক্ষেপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন অনন্ত বিজয় দাশের মা পীযুষ রানি দাশ।

সুবিদবাজারের নূরানি আবাসিক এলাকার ‘অনন্তহীন’ বাসায় গিয়ে দেখা গেল অসুস্থ শরীরে সন্তান হারানোর শোক বয়ে চলা এই মায়ের নিরব হাহাকার। এক বছরেও অনন্ত হত্যা মামলার চার্জশিট হয়নি, শুরু হয়নি বিচার।

এমনকি আসামীরাও জামিন পেয়ে যাচ্ছে। ছেলে  হত্যার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাবেন কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,  "দাবি জানিয়ে কি করব, সরকার কি আমার ছেলে এনে দিতে পারবে, কিচ্ছু পারবে না"।

বাবা-মা অসুস্থ থাকায় অনন্ত সবসময় তাদের খেয়াল রাখতেন। অফিস যাওয়ার আগে এবং অফিস থেকে এসে নিজের হাতে মাকে ঔষধ খাওয়াতেন। সেই সন্তান অনন্ত আজ নেই। পীযুষ রানি বলেন, "অনন্ত আমার সব থেকে ছোট সন্তান, সব থেকে আদরের। আমার বুকের ধন হারিয়ে গেছে আর তো ফিরে আসবেনা"। এসময় আশ্রুসজল হয়ে উঠে তাঁর চোখ।

আরও পড়ুন- অনন্তের জন্য এলাকাবাসীর উদ্যোগে এবার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ


ধর্মীয় উগ্রবাদীরা নিজ পাড়াতেই অনন্তকে কুপিয়ে হত্যা করা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "যেখানে জন্ম বেড়ে উঠা সব, যে দিঘির পাড়ে শৈশবে খেলাধূলা করে বড় হল অনন্ত, সেখানেই তাকে এক সকালে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হল। এই হাহাকার আমি কাকে জানাব? "। ঘরের কাছে এসে খুন করে যাচ্ছে এই অবস্থায় কার কাছে কি আশা করব, প্রশ্ন রাখেন  তিনি।


আরও পড়ুন- অনন্ত হত্যার এক বছর : জামিনে বেরিয়ে আসছে আসামীরা, চার্জশীটের খবর নেই

২০১৫ সালের ১২ মে সকালে অফিস যাওয়ার পথে বাসা অদূরে নিজ পাড়া সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকার দস্তিদার দিঘির পাড়ে কয়েকজন উগ্র ধর্মীয় জঙ্গি নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে অনন্ত বিজয় দাশকে। অনন্ত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতেন। তার লেখা ও সম্পাদিত একাধিক বই প্রকাশিত রয়েছে। সিলেটে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত 'যুক্তি' নামের বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিনেরও সম্পাদক ছিলেন।

হত্যার পরদিন অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চার দুর্বৃত্তকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে স্থানান্তর হলে স্থানীয় একটি পত্রিকার ফটোসাংবাদিককে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিন পান।

গত বছরের ২৯ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার পূর্ব পালজুর গ্রাম থেকে মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী (২৪) ও মোহাইমিন নোমান ওরফে নোমান নামে দুই ভাই এবং আবুল খায়ের ওরফে রশীদ আহমদ (২৪) নামের তাঁদের আরেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। মামলায় বর্তমানে মান্নান রাহী জেলে রয়েছেন।

তবে নোমান ও রশীদ সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে ৫ মে সিলেট কারাগার থেকে বের হন।  ওই দিনই নাশকতার এক মামলায় আটক দেখিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার পুলিশ ফের গ্রেপ্তার করে তাঁদের।
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত