সৌরভ আদিত্য, শ্রীমঙ্গল

১০ আগস্ট, ২০১৬ ১৬:৫২

‘শ্রীমঙ্গলে খাসিয়াদের মধ্যে উচ্ছেদ আতংক’

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের পানপুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ভূমি ব্যবস্থাপনা সমস্যায় ভুগছেন। বংশ পরম্পরায় যুগযুগ ধরে এসব জমিতে বসবাস ও পান চাষ করলেও ভূমির উপর তাদের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে কারণে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে না।

খাসিয়াদের নেই কোন নিজস্ব ভিটেমাটি কিংবা ফসলি জমি। অন্যের লিজ নেয়া পাহাড়ি জমিতে বসবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছে যুগ যুগ ধরে। ভূমিহীন হিসাবে পরগাছার মতো বসবাস করা এই আদিবাসীদের এখন দিন কাটে উচ্ছেদ আতংকে। অথচ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্য আজ দেশ বিদেশে রফতানি করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের উপরে বসবাসকারী অধিকাংশ খাসিয়া পুঞ্জির নেই নিজস্ব কোন রাস্তা। অন্যের চা বাগান, জলা-জঙ্গল, ছড়া আর এবড়ো ধেবড়ো সরু আইল ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হয়। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাট সংঘাত সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে।

ছন্দপতন ঘটায় নিভৃতচারী এসব পাহাড়ি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে। বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে প্রায় সব পুঞ্জিতে, স্যানিটেশন সমস্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুবিধা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছুতেই পিছিয়ে রয়েছে এ জনগোষ্ঠী।

বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম’র সভাপতি পিটিশন প্রধান সুচিয়াং মুঠোফোনে জানান, আদিবাসী পল্লীগুলিতে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ কম। শ্রীমঙ্গলে ১১টি বড় পুঞ্জি রয়েছে। এই পুঞ্জি গুলোতে সরকারি কোন স্কুল নেই, নেই চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা, অনেক দুরে গিয়ে পড়াশুনা ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ এর আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক শ্যামল দেববর্মা বলে, দেশে আদিবাসী দিবসে সরকারী কোন অনুষ্ঠান করা হয় না। আমরা আদিবাসীরা এই দেশে শত শত বছর ধরে বসবাস করে আসছি। সরকারী ভাবে আমরা আজো আদিবাসীর স্বীকৃতিটুকুও পাইনি। আমাদের ভূমি অধিকার দেওয়া হয় নি। এখন সরকারী ভূমি ব্যবস্থাপনার কথা বলে সম্প্রদায়ের অনেককে উচ্ছেদেও চিঠি দেয়া হয়েছে। এ কারণে এখানকার অনেক আদিবাসীরা উচ্ছেদ আতংকে দিন কাটাচ্ছে।

শ্যামল দেব বর্মা আরো জানান, পাহাড়ে বসবাস করে আদিবাসীরা পান-সুপারি, লেবু আনারস চাষাবাদ করে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করে আসছে।

আদিবাসীদের ভূমি কমিশন ব্যবস্থা চালু করে তাদের সকল সমস্যার সমাধান ও নিরাপত্তা দিলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা ক্ষুদ্র জাতি সত্তার জনগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত