হামিদুর রহমান, মাধবপুর

২৪ আগস্ট, ২০১৬ ১৮:৪৮

মাধবপুরে তিন খুন: আদালতে দায় স্বীকার

মাধবপুরে ভাবি , ভাতিজি ও প্রতিবেশী এক যুবক কে খুনের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে হত্যাকারী তাহের উদ্দিন

মঙ্গলবার(২৩ আগস্ট)  রাত ৯ টার দিকে উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের বীরসিংহপাড়া গ্রামে নৃশংস এ ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঘটনার দিন রাতেই  গ্রামবাসী লাটি সোটা নিয়ে ঘাতক কে ঘেরাও করে পুলিশ কে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক কে গ্রেফতার করে । ওই গ্রামের মৃত সৈয়দ হোসেনের ছেলে তাহের মিয়া (৩৫) মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে জমির ভাগ বাটোয়ারা ও বিদেশে যাবার জন্য টাকা নিয়ে সৌদি প্রবাসী বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে এলোপাথাড়ি ভাবে জাহানারা কে ছুরিকাঘাত করে।

 এ সময় জাহানারার মেয়ে এক সন্তানের জননী শারমিন (২৫) এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। এ দৃশ্য দেখে জাহানারার ছোট ছেলে সুজাত (১০) এগিয়ে গেলে সুজাতকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। কান্না কাটির শব্দ শুনে  প্রতিবেশী আব্দুল আলীমের ছেলে শিমুল (২৫) ঘরে উকি দিতেই তাহের রক্ত মাখা ছুরি নিয়ে শিমুল কে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয় গলায় গামছা প্যাচিয়ে শিমুল কে আটকে ফেলে। পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই জাহানারা বেগম মারা যায়। শিমুল ও শারমিন কে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজন কে মৃত ঘোষণা করেন।গু রুতর আহত সুজাত কে ঢাকা সোহরাওয়াদী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তার অবস্থাও সংকটাপন্ন।

তিন খুনের ঘটনায় জাহানারা বেগমের বোন জামাই হাজী মোহন মিয়া বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে সৌদি প্রবাসী বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় দুই বছর আগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ভাবি জাহানারা বেগম মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। তখন থানার সহকারী উপ পরিদর্শক আনিসুর রহমান সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করেন। গ্রাম্য শালীসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ভিতরে ভিতরে জাহানারার প্রতি তাহের ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ট্রিপল মার্ডারের ৮ দিন আগে তাহের মিয়া বিদায় নিয়ে ইরাকের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু গত সোমবার আবার বাড়িতে এসে ভাবির নিকট জরুরী প্রয়োজনে এক লাখ টাকা চায়। টাকা না দেওয়াতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাহের মিয়া ভাবি জাহানারা , ভাতিজি শারমীন , প্রতিবেশী শিমুল কে ছুরিকাঘাত করে নৃশংস ভাবে খুন করে। রাতেই হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মাধবপুর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) সাজেদুল ইসলাম পলাশ জানান, লাশ ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের  কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক তাহের মিয়া  দুপুরে হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসাদ বেগমের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবান বন্দির সূত্র ধরে তদন্ত কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম জানান, ঘাতক তাহের কুয়েত , গ্রিস সহ বিভিন্ন দেশে থাকা কালিন সময়ে প্রচুর টাকা উপার্জন করেন। এ টাকা দেশে ভাই , ভাবির কাছে পাঠানোর পর বিদেশ থেকে এসে এর হিসাব চাইলে তারা তাকে কোন হিসাব দেয়নি। আবার ইরাকে যেতে চাইলে তার ভাবি তাকে দেখলেই মশকরা করত। এ কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিত ভাবে তার রান্না ঘর থেকে দাঁড়ালো ছুরা নিয়ে তার ভাবি জাহানারা বেগম কে আঘাত করে। এ সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে এলোপাথাড়ি ছোরা চালিয়ে ভাতিজি শারমিন এবং ভাতিজা সুজাত কে আঘাত করে। এর মধ্য ভাবি জাহানারা ও শারমিন নিহত হয়। এ সময় কান্না কাটির খবর পেয়ে প্রতিবেশী শিমুল এগিয়ে এলে দু জনের মধ্যে ধস্তা ধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ঘাতক তাহের শিমুলের পেটে চুরি ঢুকিয়ে দিলে তার নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে মাধবপুর হাসপাতালে মারা যায়।

জানা যায়, ১০/১২ বছর আগে তাহের উদ্দিন পাশের বাড়ির সোহেল নামের এক যুবককে এসিড ছুড়ে মেরেছিল। পরে জায়গা জমি দিয়ে ওই ঘটনার মিটমাট করতে হয়। এরপর থেকেই তাহের উদ্দিনের সাথে তার ভাই গিয়াস উদ্দিনের দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত