শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১২:২৫

হবিগঞ্জের কিবরিয়া অডিটরিয়াম এখন ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ,প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত কিবরিয়া অডিটরিয়াম এখন ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। হবিগঞ্জের সাংস্কৃতিক চর্চা এগিয়ে নিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার প্রচেষ্টায় প্রায় ১৫ বছর আগে এটি নির্মিত হয়।

পৌরসভার যথাযথ দেখভালের অভাবে এই অনন্য স্থাপনাটি এখন ইনডোর স্পোর্টস সেন্টারে রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন চলে ব্যাডমিন্টন খেলা অডিটরিয়ামের অভ্যন্তরে। এ নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

দাগ টেনে, নেট টানিয়ে, হাই পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে রীতিমত ইনডোর ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠে পরিনত করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম প্রানকেন্দ্র কিবরিয়া অডিটরিয়ামকে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রাক্তন খেলোয়াড় কল্যান সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ কিবরিয়া অডিটরিয়াম মে ব্যাডমিন্টন খেলার অনুমতি দেন।

এ ঘটনা জানার পর হবিগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পৌরকর্তৃপক্ষ এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানান বিভিন্ন মহলের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

প্রসঙ্গত যে, হবিগঞ্জের সংস্কৃতি কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৮শে মার্চ কিবরিয়া অডিটরিয়ামটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়। ২ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হলটি নির্মান করা হয়। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০০১ সালের ২৪ মার্চ উদ্বোধন করা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার নামে এই অডিটরিয়ামটি।

৬০০ আসন বিশিষ্ট এই হলে উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং, ফার্নিচার, সেন্ট্রাল এসি সহ বিভিন্ন ধরনে সুযোগ সুবিধা ছিল। ২০১১ সালে হলের বৈদুত্যিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যাওয়ার পর অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে অডিটরিয়াম।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় হলের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা খসে পড়ছে। বিকল হয়ে গেছে যন্ত্রপাতি। চেয়ার, আসবাবপত্র, নানান ফার্নিচার, সাউন্ড সিষ্টেমের নানা যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। হলের অবকাঠামোগত সমস্যাও দেখা দিয়েছে। দেয়ালে, ছাদে ফাটল সৃষ্ঠি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি ঢুকে।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র দীলিপ কুমার দাস বলেন, প্রায় ২ মাস আগে প্রাক্তন খেলোয়াড় কল্যান সমিতি ইনডোর ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য আবেদন করেন। আবেদনটিতে সংসদ সদস্য আবু জাহিরের সুপারিশ থাকায় গেমের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে এলাকার কতিপয় যুবক প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতো। ইনডোর ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগ দেয়ায় অডিটরিয়ামটি নিরাপত্তায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরো জানান, প্রায় তিন মাস আগে অডিটরিয়ামটি সংস্কারের জন্য ১ কোটি টাকার বাজেট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ আসার পর সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

অডিটেরিয়ামে খেলার অনুমোদন প্রসঙ্গে খোয়াই থিয়েটারের সহ-সভাপতি লেখক সিদ্দিকি হারুন বলেন, জেলার সর্ববৃহৎ অডিটরিয়ামকে নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। একটি সাংস্কৃতিক ম কে ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠে রূপান্তর করার কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পৌর কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সকলের আন্দোলনে যাওয়া উচিত। তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বলেন আশা করবো পৌর কতৃপক্ষ অচিরেই তাদের ভুল সুধরে নেবেন।

‘জীবন সংকেত নাট্য গোষ্টি’র সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক অনিরুদ্ধ কুমার ধর শান্তনু বলেন, পৌরসভার এই সিদ্ধান্তে শুধু অবাক হইনি, ক্ষুব্দও। এমনিতেই শহরের তিন-তিনটি হলকে মূলত অকার্যকর করে শহরকে সাংস্কৃতিক চর্চা শূন্য করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষোভে দুঃখে কী বলবো এর ভাষা খোজে পাচ্ছি না। আমরা যারা সংস্কৃতি চর্চা করি, আমরা জানি কী প্রতিবন্ধকতা পার করে যেতে হয়। আমাদের সংগঠন ‘জীবন সংকেতে’র একটি কার্যালয় নেই, রিহার্সেল দেয়ার জায়গা নেই। যেখানে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির কাজ এলাকার সংস্কৃতি চর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা, সাবসিডি দেয়া, সেখানে কিবরিয়া হলের মতো একটি অত্যাধুনিক হলকে ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ বানানো হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, হলটির ভাড়া আকাশছোঁয়া করে প্রথমে এটিকে সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর আয়ত্ত্বের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর এর ট্রান্সফরমার নেই বলে ইলেকক্ট্রিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কাউকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। এখন খেলার মাঠ বানানো হয়েছে। এটি সুপরিকল্পিতভাবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ধ্বংসের পায়তারা বলে তিনি মনে করেন। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।

এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন খান বলেন, এক সময়ে সারা বাংলাদেশে ভালো মানের ৪টি হলের মধ্যে হবিগঞ্জ কিবরিয়া অডিটরিয়াম ছিল একটি। বিভিন্ন অজুহাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ হলটিকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি এটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিবরিয়া অডিটরিয়ামের মে ব্যাডমিন্টন খেলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একটি সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রের বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অতিসত্ত্বর এ সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।

তিনি আরো বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিরাপত্তার অজুহাতে সাংস্কৃতিক ম কে খেলার মাঠ বানাতে পারেন না। তিনি যদি একটি হলের দেখভাল করতে না পারেন তাহলে হবিগঞ্জবাসীর সেবা দেবেন কিভাবে?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত