কুলাউড়া প্রতিনিধি

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৬:১৬

কুলাউড়ায় পিডিবির ভৌতিক বিল, পাল্টাপাল্টি মামলা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার লক্ষিপুরে একটি মাজারে পিডিবি কর্তৃক ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল বকেয়া এবং অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেখিয়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভূক্তভোগী ওই মাজারের মোতওয়াল্লী মো. রুশন আলী অবৈধ ভৌতিক বিল থেকে পরিত্রাণের জন্য বিদ্যুৎ বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রুশন আলী বাদী হয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং ১৩৬/২০১৬)। এ ব্যাপারে পিডিবি ও গ্রাহকের মধ্যে মামলা-পাল্টা মামলার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ ও ভূক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কুলাউড়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর এলাকায় কাদিরবক্স এর মাজারে ২০০৫ সালে ডিসেম্বর মাসে মাজারের মোতওয়াল্লী মো. রুশন আলীর নামে মিটার নং ০৫১০৪৬ ও কনজ্যুমার নং ৪৬১৬০৭৪৫ এ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে কোন বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকের নিকট প্রদান করা হয়নি ও মিটার রিডিংয়ের জন্য কেউ যোগাযোগ করেননি। অথচ কুলাউড়া বিদ্যুৎ অফিস থেকে মিটার চেক না করেই চলতি বছরের মার্চ মাসে গ্রাহকের মিটারে সর্বমোট ব্যবহৃত ইউনিট ৩৪,৭৬৫ ও মে মাসে সর্বমোট ব্যবহৃত ইউনিট ৩৫,৪১৫ দেখিয়ে মনগড়া ভৌতিক বিল প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে একই বছরের ৬ জুন কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুস্তাফিজুর রহমান বকেয়া বিলের জন্য গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ও এনালগ মিটারটি জব্দ করেন। ওই সময় জব্দকৃত মিটারটিতে মোট ১০,৮৯৯ ইউনিট ব্যবহৃত হয়েছে উল্লেখ করে একটি রিসিভ কপি গ্রাহককে প্রদান করেন তিনি।

সর্বশেষ গত জুলাই মাসে ওই গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিট ৩৫,৬৬৫ দেখিয়ে ১ লাখ ৮১ হাজার ১৬৯ টাকার জুন মাসের আরেকটি ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হয়, যা গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিটের চেয়ে ২৪,৭৬৬ ইউনিট অতিরিক্ত। ৩১ জুলাই ভৌতিক বিলসহ বকেয়া বিল প্রদান না করায় ও মাজারের এতিমখানায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার দেখিয়ে সিলেট বিদ্যুৎ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করা হয় রুশন আলীর বিরুদ্ধে।

এদিকে এই ভৌতিক বিল কর্তন করে মূল বিল প্রদান করার জন্য ২০৯/ ৩১.০৮.২০১৬ইং তারিখে সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে আবেদন করেন গ্রাহক রুশন আলী। এ বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় অতিরিক্ত অবৈধ বিদ্যুৎ বিলের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে রুশন আলী মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী, কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রে নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, আবাসিক প্রকৌশলী এবং মৌলভীবাজার বিউবো’র পওস সার্কেল এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী- এই ৫ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন (নং ১৩৬/২০.০৯.২০১৬)।

অভিযোগ রয়েছে মিটার রিডাররা অফিসে বসে মনগড়া ও আনুমানিক বিল প্রদান করে থাকেন। এতে করে প্রায়শই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বোঝা বইতে হয় গ্রাহকদের। সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে আসলে নানা অজুহাত দেখিয়ে বলা হয়, মিটার চেক করে পরবর্তীতে ঠিক করে দেয়া হবে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হন গ্রাহকরা।

ভূক্তভোগী রুশন আলী জানান, বিদুৎ সংযোগ নেয়ার পর বিদ্যুৎ অফিস থেকে কেউই কোনদিন মিটার চেক করতে আসেননি এবং কোন বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হয়নি। অথচ এ বছর মিটারে ব্যবহৃত ইউনিটের চেয়ে অতিরিক্ত মনগড়া ইউনিট দেখিয়ে মার্চ ও মে মাসে দুটি বিল প্রদান করা হয়। এছাড়া বকেয়া বিলের কোন প্রকার নোটিশ প্রদান না করেই আকস্মিকভাবে জুন মাসের ৬ তারিখ উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুস্তাফিজুর রহমান মাজারে এসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন এবং মিটারে ১০,৮৯৯ ইউনিট ব্যবহৃত হয়েছে ও মিটারটি অক্ষত আছে এমনটি লিখে তাঁর স্বাক্ষর নিয়ে একটি কাগজ প্রদান করে মিটারটি খুলে নিয়ে যান। এসময় ওই কাগজে কোন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কথা উল্লেখ করেননি তিনি।

সংযোগ বিচ্ছিন্নের তিন দিন পর ওই মাসের ৯ তারিখ একটি নোটিশ প্রদান করা হয়। রুশন আলী আরও জানান, মাজারের মাদ্রাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ মিটার থেকে নেয়া হয়েছে। অথচ ভৌতিক বিলসহ বকেয়া বিল প্রদান না করায় ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে সিলেট বিদ্যুৎ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন কুলাউড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী খন্দকার কামরুজ্জামান। অতিরিক্তি বিল কর্তন করার জন্য কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিলেট বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সর্বশেষ আমি জেলা জজ কোর্টে মামলা দায়ের করেছি।

কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, বকেয়া বিল প্রদান না করায় মাজারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসময় মিটারে গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিট ১০,৮৯৯ ছিলো। আমি কয়েক মাস আগে এখানে যোগদান করেছি তাই অতিরিক্ত বিল প্রদান সম্পর্কে কিছু জানিনা। তবে এই অতিরিক্ত বিল প্রদান কোনভাবেই কাম্য নয়। অতিরিক্ত বিল কর্তন করার ব্যাপারে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হিসাব নং ডি ৪২৭, ডায়েরী নং ৫২৭/ ০৫.০৯.১৬ইং তারিখে একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে সুপারিশ করেছি। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল হোসেন হজ্বের জন্য দেশের বাইরে থাকায় তাঁর স্থানে দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী  মোজাফফর হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস মোবাইলে জানান, সংযোগটি মাজার সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বিষয়টি আমাদের সকলের জন্য স্পর্শকাতর। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে গ্রাহককে তিনি তাঁর মিটার রিডিং অনুযায়ী বিলটি দেওয়ার অনুরোধ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত