নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ এপ্রিল, ২০১৭ ২৩:৪৯

রাগীব আলীর ছেলের মানসিক সমস্যা নেই, ৬ এপ্রিল প্রতারণা মামলার রায়

প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান দখলে করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় অভিযুক্ত রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা পায়নি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ।

রোববার সিলেটের মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দাখিল করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন দাখিলের পরপরই উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা রায় ঘোষণার জন্য আদালত ৬ এপ্রিল নতুন তারিখ ধার্য করেছেন। রাতে যোগাযোগ করলে আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সিলেটে দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা-বাগান দখল করে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার রায় ঘোষণার জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ ধার্য ছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে রায় ঘোষণা স্থগিত রেখে রাগীব আলীর ছেলে মামলার দ্বিতীয় আসামি আবদুল হাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ জন্য তখন রায় ঘোষণা স্থগিত রেখে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ৩০ মার্চের মধ্যে আবদুল হাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
গত ৩০ মার্চ মামলার ধার্য তারিখে প্রতিবেদন দাখিল না করায় মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম এক আদেশে হাসপাতালের পরিচালককে পাঁচ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল ও প্রতিবেদন দাখিলে দেরি হওয়ার কারণ লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নির্দেশের তিন দিনের মাথায় রোববার হাসপাতালের পরিচালকের পক্ষে উপপরিচালক দেবপদ রায় স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে আবদুল হাইয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মানসিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর স্বাস্থ্যগত অন্য কোনো সমস্যাও নেই। হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান আর কে এস রয়েলের নেতৃত্বে সাত সদস্যের চিকিৎসক দলের পরামর্শে তৈরি করা এ প্রতিবেদন দাখিলে সময়ক্ষেপণের বিষয়ে একটি ব্যাখ্যাও দাখিল করা হয়।

এতে স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দাখিলে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক লিখিত ব্যাখ্যায় বলা হয়, সিলেটে গত ২৫ মার্চ জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলাকালে বোমা হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দাখিলে দেরি হয়েছে।

২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি ও সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুটি মামলা করেন সিলেটের কোতোয়ালি থানায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ দুটি মামলার নতুন করে তদন্ত শেষে সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। এর মধ্যে গত ২ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতির মামলায় রাগীব আলী ও ছেলে আবদুল হাইয়ের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালত।

আত্মসাৎ মামলায় রাগীব আলী, ছেলে আবদুল হাই, মেয়ে রোজিনা কাদির ও তাঁর স্বামী আবদুল কাদির, তারাপুর চা-বাগানের ভুয়া সেবায়েত সাজা রাগীব আলীর আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত আসামি। এর মধ্যে মেয়ে ও তাঁর স্বামী পলাতক, মোস্তাক ও পংকজ জামিনে রয়েছেন।

গত বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ একটি বেঞ্চ রায়ে মামলা দুটি পুনরুজ্জীবিত করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত বছরের ২২ মার্চ সরকারি কৌঁসুলির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত করে পুলিশের বিশেষায়িত শাখা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১০ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

ওই দিন বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন হয়ে পালিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ চলে গিয়েছিলেন ছেলেসহ রাগীব আলী। ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে রাগীব আলী এবং এর আগে ১২ নভেম্বর ভারত থেকে জকিগঞ্জ এসে আবদুল হাই গ্রেপ্তার হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত