নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুলাই, ২০১৭ ১৪:৩৯

লিটু হত্যা: দুপুরে কর্মী দাবি, রাতে অস্বীকার ছাত্রলীগের

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষে গুলিতে যুবক নিহতের ঘটনায় দুপুরে নিজেদের কর্মীদের দাবি করে সন্ধ্যায় অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ বলছে নিহত যুবক বহিরাগত। ছাত্রলীগ দাবি করেছে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা কর্মী দাবি করেছিল, কিন্তু পরে নিশ্চিত হয় নিহত যুবক বহিরাগত।

গত সোমবার (১৭ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে গুলির শব্দ শুনে ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা ওই কক্ষ থেকে খালেদ আহমদ লিটুর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। গুলির ঘটনার আগে ওই কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা পাভেল গ্রুপের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। এরআগে ওই দিন সকালেই কলেজে ছাত্রলীগের পল্লব ও পাভেল গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

ঘটনার পর পরই সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, “খালেদ আহমদ লিটু ছাত্রলীগের কর্মী। কিছু বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে তাকে হত্যা করেছে।” ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের হত্যাকাণ্ডে সম্পর্কে বলেন, “অপরাধীদের ব্যাপারে ছাত্রলীগ জিরো টলারেন্স দেখাবে।” বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দায়ি করে তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।”

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার রাতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও রায়হান চৌধুরী সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহত খালেদ আহমদ লিটুকে বহিরাগত হিসেবে দাবি করেন। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রলীগ দাবি করে লিটু একজন বহিরাগত সন্ত্রাসী হিসাবে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে এবং অবৈধ অস্ত্রের ম্যাগাজিন লোড করতে গিয়ে একটি রুমে অসাবধানতাবশত নিজের গুলিতে নিজেই নিহত হন লিটু।

জেলা ছাত্রলীগ তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের কোন কার্যক্রম নেই বলেও দাবি করে।

নিহত খালেদ আহমদ লিটুকে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে প্রচারকে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল ষড়যন্ত্রকারীদের কাজ বলেও অভিযোগ করে ছাত্রলীগ।

এদিকে, দুপুরে নিজেদের কর্মী দাবি করে রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অস্বীকার করা সম্পর্কে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা স্থানীয়ভাবে জানতে পেরেছিলাম যে ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পরে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে তার ছাত্রত্ব নেই, সে একজন মোবাইল দোকানদার এবং একজন অছাত্র কোনোভাবেই ছাত্রলীগের কর্মী হতে পারে না বলেই আমরা বিষয়টি পরিষ্কার করে দিতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠাই।”

রায়হান চৌধুরী আরও জানান, “সেদিন সকালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও কিন্তু কোন সংঘর্ষ হয়নি, অতএব সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত বক্তব্যটি ভুল।”

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার সময় আমরা ফেঞ্চুগঞ্জে ত্রাণ বিতরণে ছিলাম আর সেখান থেকে জানতে পেরেছিলাম ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি ভুল ছিল। সে ওই ক্যাম্পাসে বহিরাগত হিসেবে গিয়েছিলো এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি যে সে নিজের পিস্তলের গুলিতে নিহত হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আমরা সে বিষয়টিই উল্লেখ করেছি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন, “নিহত লিটু ছাত্রলীগ কর্মী কি না সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্যগত ভুল থাকলেও এখন বিষয়টি নিশ্চিত যে সে ছাত্রলীগের কর্মী ছিল না, সে ওই কলেজে বহিরাগত।”

লিটু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার রাতে তার পিতা খলিল উদ্দিন বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আজ্ঞাতনামা ৫ জন সহ সর্বমোট ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত