শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

২৬ জুলাই, ২০১৭ ১২:১৩

চুনারুঘাট কুদ্রতীয়া মাদ্রাসা চলছে কোন কুদরতে?

গ্রাম্য প্রবাদ আছে ‘ঘর নষ্ট বড় ভাই পাগল’। সেই প্রবাদের সাথে পাগলের সম্পৃক্ততা না থাকলেও প্রতিষ্ঠানের প্রধানের খামখেয়ালীপনার কারণে যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডুবতে বসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অব্যবস্থাপনা আর শিক্ষার পরিবেশ অনুপস্থিত থাকা স্বত্বেও এই প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এ বছরেও।


জেলার চুনারুঘাট উপজেলার একটি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উবাহাটা কুদ্রতীয়া দাখিল মাদ্রাসা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮৭০ সালে। প্রাচীন এই মাদ্রাসাটি জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু মাদ্রাসার বর্তমান সুপাররিনটেনন্টের খামখেয়ালীপনার কারণে এই মাদ্রাসাটি এখন ধসের দ্বারপ্রান্তে।

২৫ জুলাই সকাল ১০টায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার মো.ট ৩৬৮ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত রয়েছে মাত্র ৫৪। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান অন্যান্য দিনের তুলনায় ওইদিন নাকি উপস্থিতির হার সর্বাধিক। সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্কুলের দপ্তরি আসেন। এর কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হন কয়েকজন শিক্ষক। সুপারিন্টেনডেন্ট আব্দুর রউফের সাক্ষাত পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩ ঘণ্টা। বেলা ১টার দিকে তার দেখা মিলল।

অভিযোগে জানা যায়, শুধু ওইদিনই নয়,দেরীতে আসা নিত্যদিনের। মাদ্রাসার মো.ট শিক্ষক ১০জন। সুপারিন্টেনডেন্টকে অনুসরণ করে অন্যান্য শিক্ষকরাও দেরীতে মাদ্রাসায় আসেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। শিক্ষাদানের কোন সময় সূচি নেই। যে যতক্ষণ পারেন ক্লাস নেন। শিক্ষককে ক্লাসে রেখে শিক্ষার্থীরা বাইরে আড্ডা মারতেও দেখা যায়।

সুপারিন্টেনডেন্ট মূলত মাদ্রাসা নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। অভিযোগে প্রকাশ, তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুসারী। বাড়ির কাজকর্ম ও স্থানীয় বাজারে আড্ডা দিয়ে সময় থাকলে তিনি মাদ্রাসায় যান। এর প্রমাণ পাওয়া গেল মাদ্রাসার পরিদর্শনের খাতায়। চলতি বছরের ১৪মার্চ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক বিএম আসাদুল ইসলাম মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। ওইদিন সকল শিক্ষকগণ উপস্থিতি থাকলেও সুপারিনটেডেন্ট উপস্থিত নেই বলে মন্তব্য করেন। তিনি মন্তব্য করেন যে প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক পরিবেশ সন্তোষজনক নয়। ক্লাস রুমগুলো নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে।
গত ২৩ মে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপজেলা একাডেমীক সুপারভাইজার রাসেল আহমেদ মাদ্রাসা পরিদর্শনকালে মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মো. আব্দুর রউফ সহ কয়েকজন শিক্ষককে মাদ্রাসায় উপস্থিত নেই বলে পরিদর্শন খাতায় মন্তব্য করেছেন।

গত ২০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শামছুল হক মাদ্রাসা পরিদর্শক করতে এসেও সুপারিন্টেনডেন্ট মো. আব্দুর রউফকে পাননি বলে পরিদর্শন খাতায় মন্তব্য করেন।

মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী আছে মো.ট ২১৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬০জন ও ছাত্রী ৫৭জন। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী আছে মো.ট ১৫১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৭জন ও ছাত্রী ৫৪জন।

২৫ জুলাই এই প্রতিনিধি সরজমিনে প্রাথমিক বিভাগে ১৭ জন ও মাধ্যমিক বিভাগে ৩৭ জন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত পান। খোজ নিয়ে জানা যায়, ৬মাস আগে মাদ্রাসায় এসেম্বলিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয়। এরপর থেকে তা বন্ধ রয়েছে।

মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র মো. সায়মন মিয়া বলেন আমাদের সময়ে মাদ্রাসায় ছাত্রদের জন্য সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী ও ছাত্রীদের কালো বোরকা ও সাদা স্কার্ফ ড্রেস ছিল। এখন তাও নেই। বর্তমান শিক্ষার্থীরা এখন যে যেমন পারে পোশাক পরে আসছে।

প্রাক্তন ছাত্র মো.তাচ্ছির আহমেদ মামুন বলেন, "প্রয়োজনীয় দেখভালের অভাবে মাদ্রাসাটি এখন হরিঘোষের গোয়ালে পরিনত হয়েছে।" শিক্ষকরা তাদের কর্তব্য পালনের চেয়ে মাস শেষে পকেটে বেতন নেওয়াটাই প্রধান্য দিচ্ছেন।

অভিভাবক মো. নূর আলম বলেন, মাদ্রাসায় কোন সময় সূচি নেই। ক্লাসের সময় শিক্ষার্থীরা শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারে বা বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষকও অভিযোগ করে বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যাই হল আমাদের সুপারিন্টেনডেন্ট। তিনি বেশির ভাগ সময়ই মাদ্রাসায় আসেন না। কোন দিন আসলেও ঠিক সময়মত আসেন না। তার এই কর্তব্য অবহেলার কারণে মাদ্রাসা পরিচালনা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একজন অভিভাবক জানান বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজের কাছে একটি ট্রাভেলস এজেন্সি পরিচালনা করেন। মাদ্রাসায় হাজিরা খাতায় সই দিয়েই তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় কাটান।

এ ব্যাপারে সুপারিন্টেনডেন্টের সাথে আলাপ করলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে আমার কোন কিছু বলার নেই। তিনি বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর এড়িয়ে গিয়ে গর্ব করে উল্টো প্রশ্ন করেন আমি সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন না করলে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আমাকে উপজেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হই কিভাবে?

তিনি আরও বলেন, এ বছরেও এই প্রতিষ্টনটি উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত