নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জুলাই, ২০১৭ ১৩:৪০

চার শিশু হত্যা : রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ ‘অসন্তুষ্ট’, আসামীপক্ষ ‘মর্মাহত’

হবিগঞ্জের বাহুবলে ৪ শিশু হত্যার রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দুই পক্ষেরই আইনজীবীরা। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, সকল আসামীর বিরুদ্ধেই অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছেন তারা। ফলে সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়া উচিত ছিলো।

আর আসামীপক্ষের দাবি, বেআইনিভাবে এই রায় প্রদান করা হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যমতে, কাউকে মৃত্যুদণ্ড ও কাউকে খালাস প্রদানের সুযোগ ছিলো না। খালাস প্রদান করলে সকলকে খালাস আর মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে সকলকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করাই আইনসম্মত ছিলো।

প্রায় দেড় বছর আগের চাঞ্চল্যকর এই হত্যার মামলার রায় বুধবার ঘোষণা করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান।

৯ আসামীর মধ্যে রায়ে রুবেল মিয়া, আরজু মিয়া ও পলাতক উস্তার মিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আর রুবেলের ভাই জুয়েল মিয়া ও শাহেদকে সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।

হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার জুয়েল-রুবেলের বাবা আব্দুল আলী বাগাল এবং পলাতক আসামি বাবুল মিয়া ও বিল্লালকে আদালত খালাস দিয়েছে। এই মামলার আরেক আসামী বাচ্চু মিয়া আগেই র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কিশোর কুমার কর বলেন, আমরা সকল আসামীদের অপরাধ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। ফলে এই রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আশা করেছিলাম সকল আসামীর মৃত্যুদণ্ড হবে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলে পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আর আসামীপক্ষের আইনজীবী শফিউল আলম বলেন, এই রায় আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবে পরিপন্থি। সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী দণ্ড দিলে সব আসামীকে দিতে হবে আর খালাস দিলেও সবাইকে দিতে হবে।

তিনি বলেন, তিন আসামী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলেও তা স্বপ্রণোদিত ছিলো না। এছাড়া ৫২ সাক্ষীর কেউই নিরপেক্ষ সাক্ষী নন। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ কিছুতেই প্রমাণ করতে পারেনি। এই রায়ে আমরা খুবই মর্মাহত, সংক্ষুব্ধ, হতাশ। আমরা মনে করি, উচ্চ আদালতে গেলে আসামীরা অবশ্যই খালাস পাবে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

উল্লেখ্য, গত বছরে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়া তালুকদারের ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)।

মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তার দুই চাচাত ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল ছিল সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র।

নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ইছাবিল থেকে তাদের বালিচাপা লাশ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাহুবল থানায় নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া।

২০১৬ বছরের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন নয়জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে বলা হয়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারকাজ শুরুর পর ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এরপর গত ১৫ মার্চ মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে আরও সাতজনের সাক্ষ্য শেষে রায় দেওয়া হল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত