শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

২৬ জুলাই, ২০১৭ ১৪:০৮

‘মূল পরিকল্পনাকারী’ খালাস পায় কিভাবে, চার শিশুর মায়েদের প্রশ্ন

যে সবকিছুর পরিকল্পনা করলো, যা নির্দেশে আমার ছেলেকে খুন করা হলো; সে কিভাবে খালাস পেয়ে যায়- কাঁদতে কাঁদতেই প্রশ্ন করেন শিশু তাজেলের মা আমেনা খাতুন।

একই প্রশ্ন শিশু মনিরের মা ছুলেমা খাতুনেরও। বাড়ির উঠানে গড়াগড়ি করে কাঁদতে কাঁদতে তিনিও প্রশ্ন তুলেন, আব্দুল আলী বাগাল কিভাবে খালাস পায়।

বাগালের পরিকল্পনায়ই তাদের শিশুদের হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ এই নারীর।

বুধবার দুপুরে বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে গিয়ে কথা হয় এই নারীদের সাথে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাজেল-মনিরসহ এই গ্রামের ৪ শিশুকে হত্যা করা হয়। বুধবার এই মামলার রায়ে তিনজনকে ফাঁসি ও দুইজনকে সাত বছরের কারাদন্ড দেন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান। রায়ে প্রধান অভিযুক্ত আব্দুল আলী বাগালসহ তিনজনকে খালাস প্রদান করা হয়।

তিনজনকে খালাস প্রদান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহত শিশুদের স্বজনরা।

দুপুরে ওই শিশুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রায় শোনার পর বাড়ির উঠানো লুটোপুটি খেয়ঢে কান্না করছেন নিহত শিশুদের মা-দাদীসহ স্বজনরা। প্রতিবেশীরা এসে তাদের স্বান্তনা প্রদানের চেষ্টা করছেন।

কাঁদতে কাঁদতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন চার শিশুর মা আমেনা খাতুন, ছুলেমা খাতুন, পারুল বেগম ও মিনারা খাতুন এবং তাদের দাদী মরম চান। ৪ জনকেই একটি এম্বুলেন্সে করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. নাসিম রায় ঘোষণার খবর শোনে হাজির হন ওই শিশুদের বাড়িতে। তিনিও ক্ষুব্দ স্বজনদের স্বন্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

মো. নাসিম বলেন, আব্দুল আলী বাগাল এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত। তিনি কিভাবে খালাস পেয়ে গেলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবু আদালতের উপর আমার কিছু বলার নেই।

বুধবার দুপুরে ঘোষিত রায়ে ৯ আসামীর মধ্যে রুবেল মিয়া, আরজু মিয়া ও পলাতক উস্তার মিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আর রুবেলের ভাই জুয়েল মিয়া ও শাহেদকে সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।

হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার জুয়েল-রুবেলের বাবা আব্দুল আলী বাগাল এবং পলাতক আসামি বাবুল মিয়া ও বিল্লালকে আদালত খালাস দিয়েছে। এই মামলার আরেক আসামী বাচ্চু মিয়া আগেই র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন।

উল্লেখ্য, গত বছরে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়া তালুকদারের ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)।

মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তার দুই চাচাত ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল ছিল সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র।

নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ইছাবিল থেকে তাদের বালিচাপা লাশ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাহুবল থানায় নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া।

২০১৬ বছরের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন নয়জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে বলা হয়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারকাজ শুরুর পর ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এরপর গত ১৫ মার্চ মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে আরও সাতজনের সাক্ষ্য শেষে রায় দেওয়া হল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত