নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ অক্টোবর, ২০১৭ ১৫:৫৪

এবারের প্রবারণা পূর্ণিমার সন্ধ্যার ফানুস উড়াবে চার ধর্মের প্রতিনিধিরা

এবারের প্রবারণা পূর্ণিমায় সিলেট বৌদ্ধবিহার প্রথমবারের মতো ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণস্বরূপ চার ধর্মাবলম্বীদের সাথে নিয়ে একসাথে উড়াতে যাচ্ছে ফানুস।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে এ কথা জানান সিলেট বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ সংখ্যানন্দ থের।

এসময় তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার সরকার যদি প্রকৃতভাবে গৌতম বুদ্ধের আদর্শিত হয়ে থাকে, তবে আজ প্রবারণা পূর্ণিমাতেই আত্মসমালোচনা করে সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করবে।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ সংখ্যানন্দ থের বলেন, মিয়ানমারে একটি জাতিগোষ্ঠীর ওপর যেভাবে নির্যাতন চলছে তা অমানবিক। রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে এবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় তেমন কোনো জৌলুস চোখে পড়েনি। তবে ধর্মীয় সব আচার পালন করা হয় সিলেট বৌদ্ধবিহারে। এ সময় পৃথিবীর সব প্রাণীর শান্তির জন্য প্রার্থনাও করা হয়।

এ ছাড়াও তিনি বলেন, এ বছর প্রবারনা পূর্নিমায় ফানুস না উড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সিলেট বৌদ্ধবিহার প্রথমবারের মতো  ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণস্বরূপ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে সন্ধ্যায় চারটি ফানুস উড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আত্মশুদ্ধির দিন। ভুলগুলোকে পেছনে ফেলে ভালো গুণ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিন।

সংখ্যানন্দ থের বলেন, আপনারা জানেন সম্প্রতি মিয়ানমারে অমানবিক ঘটনা ঘটছে, সেখানে সরকার এবং সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রতিকার কামনা করছি।

এই বৌদ্ধ ধর্মগুরু আরও বলেন, আমরা আশা করব আজকের এই দিনে সেই মিয়ানমার সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। যেহেতু তারা বলে থাকে, তারা বুদ্ধ ভাবাপন্ন দেশ বা বুদ্ধের আদর্শে আদর্শিত। যদি তারা প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধের আদর্শে আদর্শিত হয়ে থাকে, তা হলে আজকে আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের  আবিষ্কার করবেন। তাদের যে অন্যায় আচরণগুলো আছে, তারা সেখান থেকে পরিশুদ্ধতা অর্জন করবেন। মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছেন তা থেকে নিবৃত্ত হবেন। তাদের যে জনগোষ্ঠী রয়েছে তা সুনাগরিকের সব অধিকার দিয়ে সুরক্ষিত করবেন সেই আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। পৃথিবীতে মনুষ্যত্বের জয় হোক, আজকের দিনে সেই কামনাই করছি।

প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের কাছে পাপমোচনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এর মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের ত্রৈমাসিক বর্ষবাস শেষ করেন। এই পূর্ণিমা পালনের মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের পাপমোচন হয় বলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশ্বাস। এই দিনে বৌদ্ধ পূজা, সংঘদান, পিণ্ডদান, অষ্টপরিষ্কার দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, শীলগ্রহণ, প্রদীপ পূজা, ফানুস উড়ানোর মতো নানা আচার পালন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত