শাহ শরীফ উদ্দিন

১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ১৮:১০

বিটুমিন লেপ্টে নগরীতে বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র বিকৃত করেছে দুর্বৃত্তরা

সিলেটে দেয়ালে আঁকা বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র বিটুমিন লেপ্টে নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিকৃত করেছে জাতির জনকের প্রতীকী ছবি।

নগরীর ডা. চঞ্চল সড়কের পাশে পুরাতন মেডিকেল কলোনির পুরো দেয়াল জুড়ে আঁকা হয় বাঙালীর গৌরবময় চিত্র। আর এতে স্থান পায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি দেয়ালচিত্র। সম্প্রতি এই তিনটি ছবিই কে বা কারা নষ্ট করে ফেলেছে। কোথাও খোদাই করে আবার কোথাও বিটুমিন (গালা) এর প্রলেপ দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে এ দেয়ালচিত্রগুলো।

এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে প্রায় এক সপ্তাহ আগে জানানো হলেও তা এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এ রকম কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ জনগণ। জনসাধারণেরা বলছেন এই চিত্রকর্মের তত্ত্বাবধান করা সিটি কর্পোরেশন এর কাজ। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন তা করতে পারেনি।

জানা যায়, চলতি বছরের ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি মাসে নগরীর রিকাবিবাজার থেকে মীরের ময়দান অভিমুখী চঞ্চল সড়কের ডান পাশের পুরাতন মেডিকেল কলোনির পুরোটা দেয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে বাঙালীর সকল গৌরবময় চিত্র। চিত্র শিল্পী ইসমাইল গনি হিমন তাঁর চিত্রাঙ্কন স্কুল "আর্ট এন্ড অটিস্টিক স্কুল" এর সকল শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে অঙ্কন করেন এই চিত্র। চিত্র কর্মে যে পরিমাণ রঙ লেগেছে তা দিয়েছে 'বার্জার' এবং সার্বিক তত্ত্বাবধান এর দায়িত্বে রয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

হিমের আঁকা এই চিত্রকর্মে স্থান পেয়েছে স্বাধীনতার গৌরবময় দিনের স্মৃতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীকী ছবি, সাত বীরশ্রেষ্ঠ ও পাঁচজন ভাষা সৈনিক ও পাঁচজন বুদ্ধিজীবীর ছবি। কিন্তু  সম্প্রতি এতো সব ছবির মধ্যে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলোই কে বা কারা নষ্ট করে ফেলেছে।

জাতীর জনকের প্রতীকী ছবি নষ্ট করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেদওয়ান আহমদ বলেন, বিষয়টা খুবই কষ্টদায়ক। এ রোডে প্রায়ই যাতায়াত করি তাই বিকৃত করা ছবিগুলো চোখে পড়ে খুব বেশী খারাপ লাগলো। অথচ রাস্তার অপর পাশেই পুলিশ লাইন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সার্বক্ষণিক কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশ থাকে, তাদের কারো চোখে ঘটনাটা না ধরা পরায় আমি হতাশ!

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের আবেগ এবং আদর্শের জায়গা, তাঁর ছবি কারা বিকৃত করবে সে তো বুঝাই যায়। অথচ মূর্খের দল বুঝতে পারে না, যাকে খুন করেও মানুষের মন থেকে সরানো যায়নি তাঁর ছবি মুছে দিলেই তাকে ভুলিয়ে দেয়া যাবেনা। তাই জাতির জনকের দেয়াল চিত্রণটি পুনরায় অঙ্কন ও জাতির জনকের একটি স্থায়ী প্রতিকৃতি নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই।

ভাষা আন্দোলন সহ বাঙালীর সকল গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এই চিত্রকর্মের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানান চিত্রশিল্পী ইসমাইল গনি হিমন।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে বাঙালীর গৌরবময় সকল চিত্র তুলে ধরতে আমার প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা এই চিত্রকর্ম অঙ্কন করেছিলাম। এতে যতো রঙ লেগেছে সব দিয়েছে 'বার্জার'। আর সার্বিক তত্ত্বাবধান এর দায়িত্বে ছিলো সিলেট সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সম্প্রতি জাতির জনকের প্রতীকী ছবি কে বা কারা নষ্ট করে ফেলেছে। বিষয়টি নিন্দনীয় ও জাতি হিসেবে লজ্জার। এই বিষয়টি আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে। কয়েকদিন আগে বিষয়টি আমি সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে অবগত করেছি।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান নির্বাহী এনামুল হাবিব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। দু'এক দিনের মধ্যে ছবিগুলো ঠিক করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত