শাহ শরীফ উদ্দিন

২৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:০৩

সিলেটে ২৩৯ রেল ক্রসিংয়ের ২১৩টিই অরক্ষিত

সিগনালম্যান আছে মাত্র ২৬টিতে, দুর্ঘটনার শঙ্কা

বিকাল তিনটা। সিলেটের রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসছে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস। সেদিকে খেয়াল নেই মোটারবাইক আরোহী সায়মন জাকারিয়ার। তিনি মোটরবাইক নিয়ে উঠে যাচ্ছেন রেল ক্রসিং এর উপর। এমন সময় অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন চিৎকার দিয়ে থামালেন সায়মনকে। ঠিক তখনই পাশ দিয়ে চলে গেলো আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন সায়মন!

দৃশ্যটি গত সোমবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিব বাড়ি এলাকার সিগনালম্যানবিহীন একটি রেল ক্রসিংয়ের।

সায়মন তখন অনেকটা ভয়ে কাঁপা কাঁপা ভাব নিয়ে বলেন ‘ট্রেন যে আসছে এটি আমি খেয়াল করিনি। তাছাড়া আমার বাড়িও এখানে না। আমার বাড়ি চারখাই, বোনের বাড়ি এসেছিলাম।’

ওই এলাকার স্থানিয় বাসিন্দা ফারুক বলেন, এখানে কোন সিগনালম্যান না থাকায় প্রায় সময় এমন ঘটনা দেখা যায়। এলাকার মানুষের জানা থাকলেও এলাকার বাইরে থেকে যারা আসেন তাদের অনেকের জানা না থাকার কারণে প্রায় সময় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। তাছাড়া অরক্ষিত এই ক্রসিংটি স্কুলগামী বাচ্চাদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। তারা কোন কিছু না বুঝেই অনেক সময় দেখা যায় ট্রেন আসার সময়েও এসব ক্রসিং দিয়ে যাতায়াত করে।  

কেবল শিব বাড়ি নয়। সিলেট বিভাগের অধিকাংশ রেলক্রসিংই চলছে  সিগনালম্যানবিহীন। রেলওয়ে সিলেট বিভাগের সংশ্লিস্ট পথ প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে সিলেট বিভাগে মোট রেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২৩৯ টি। এর মধ্যে মাত্র ২৬টি ক্রসিংয়ে সিগনালম্যান থাকলেও বাদবাকি ২১৩টি রেলক্রসিংই চলছে সিগনালম্যানবিহীন। ফলে এসব অরক্ষিত রেলক্রসিং দিনে দিনে ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে।

জানা যায়, সিলেট জেলায় মোট রেল ক্রসিং ৭৭টির মধ্যে ৬ টিতে সিগনালম্যান থাকলেও ৭১টি রেল ক্রসিংয়েই নেই সিগনালম্যান। মৌলভীবাজার জেলায় মোট রেল ক্রসিং ৬৬টি, যার ৬টিতে আছে সিগনালম্যান আর ৬০টি রেল ক্রসিংই চলছে সিগনালম্যানবিহীন।

হবিগঞ্জ জেলায় মোট রেল ক্রসিং ৮০টির মধ্যে মাত্র ১৩টি রেল ক্রসিংয়ে সিগনালম্যান আছে আর বাকি ৬৭টি রেল ক্রসিংই চলছে সিগনালম্যান ছাড়া। সুনামগঞ্জ জেলায় মোট রেল ক্রসিং এর সংখ্যা ১৬টির মধ্যে মাত্র ১টি ক্রসিংয়ে আছে সিগনালম্যান, আর বাদবাকি ১৫টি রেল ক্রসিংই চলছে সিগনালম্যানবিহীন।

তবে সিলেট বিভাগে মোট  ২৩৯ টি রেল ক্রসিং এর কথা অস্বিকার করে রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (ঢাকা) আহসান জাবির বলেন “ সিলেট বিভাগে মোট রেল ক্রসিং ৯৬টি। এর ২০টিতে সিগনালম্যান আছে। তবে কোন জেলায় কতটি রেল ক্রসিং তা বলা যাবে না বলে জানান তিনি”।

রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, পথ (সিলেট) বিএম বাকিয়াত উল্লাহ বলেন, আমার আওতায় যেসকল সিগনালম্যানবিহীন রেল ক্রসিং আছে তার তালিকা আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে কয়েকটিতে ইতিমধ্যে গুমতি ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। বাকিটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাজ বলে জানান তিনি।

প্রধান কার্যালয়ে শুধু প্রতিবেদন পাঠানো তাঁর কাজ জানিয়ে রেলওয়ে সিলেটের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রেকৗশলী, পথ ( কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল) মো. এরফানুর রহমান বলেন, কোন এলাকায় কতটি রেল ক্রসিং এবং কোনটি কি পরিমাণ ঝুঁকি তৈরি করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া আমার কাজ। বাদ বাকি সব কিছু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে জানান তিনি।

উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী পথ, (শায়েস্তাগঞ্জ) মো. রুহুল আক্তার খান বলেন, আমার আওতায়  যেসকল রেল ক্রসিং দিয়ে গাড়ি চলাচল বেশি এগুলোতে সিগনালম্যান আছে। তাছাড়া যেগুলো রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ভিতরে এগুলো ট্রাফিক বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এখন নতুন করে কিছু রেল ক্রসিং তৈরি হয়েছে, যার প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে উর্ধ্বতন প্রকৌশলী, পথ ( আখাউড়া) আশরাফুল আলম খান এ ব্যাপারে কোন কথা বলার এখতিয়ার তাঁর নেই জানিয়ে বলেন, এসব বিষয়ে আমার কিছু বলার ক্ষমতা নেই। যা বলার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (ঢাকা), আহসান জাবির বলেন, “  যেসকল রেল ক্রসিং বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে হয়েছে এসব ক্রসিংয়ে সিগনালম্যান দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এক সাথে সবগুলোতে সিগনালম্যান দেওয়া সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে সবগুলোতেই সিগনালম্যান দেওয়া হবে বলে জানান তিনি”।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত