হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ২৩:০৫

হবিগঞ্জে উপজেলা আ’লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে ৭১-এ রাজাকারদের সহযোগিতার অভিযোগ

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকারের সহযোগীতা ও আশ্রয় দিয়েছেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও তার বড় ভাই কাকাইছেও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা নূরুল হক ভূইয়া।

সোমবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আজমিরীগঞ্জের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ চৌধুরী এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন-যুদ্ধকালীন সময় নুরুল হক ভূইয়া ও তার মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া তাদের বাড়িতে রাজাকার আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে গরু, ছাগল জবাই করে উল্লাস করে খাওয়ানোর মাধ্যমে এলাকার মানুষদের নির্যাতন করেছেন। এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আজমিরীগঞ্জ আদালতে দাসপার্টি খোঁজে বইয়ের লেখকসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন-১৯৭০সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীর নৌকা প্রতিকে প্রচারণায় আজমিরীগঞ্জে জনসভায় গেলে নুরুল হক ভূইয়া জনসভার বিরোধীতা করেন এবং নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আম মার্কা প্রতিকের পক্ষে কাজ করেন। এ সময় নুরুল হক ভূইয়াকে তার ছোট ভাই মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া সমর্থন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাকাইলছেও (গোপালপুর) বাসিন্দা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ চৌধুরী আরো বলেন-  মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভূইয়া ভাইদ্বয় ভৈরব থেকে বিহারীদের ভাড়া করা লঞ্চের ও বিভিন্ন স্থানের মালামাল, প্রায় কয়েক মনের উপরে স্বর্ণালংকার, বিপুল পরিমাণ টাকা পয়সা, লুঠপাটের করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।  তারা রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে মেঘনা রিভার ফোর্স এর কোম্পানী কমান্ডার তৎকারীন আজমিরীগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাকালীন কমান্ডার সৌলরী গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর রহমান চৌধুরীর নেতৃতাধীন  সহযোদ্ধারা সাবেক সেনা সদস্য মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মুন্সি, মর্তুজ আলী ও তৈয়বুর রহমান খান গংরা এবং দাসপার্টির সদস্য ইলিয়াছ চৌধুরী, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মতিউর রহমান, হায়দারুজ্জামান খান (ধন মিয়া), মুহাম্মদ আলী মুমিন, আব্দুর রশিদ সহ দাসপার্টির মুক্তিযোদ্ধাগণ লোকায়িত নুরুল হক ভূঁইয়াকে ২টি অস্ত্রসহ আটক করেন। পরবর্তীতে কাকাইলছেও রমনী মোহন চৌধুরীর বাড়ীতে নিয়ে আসেন এবং লুন্ঠিত মালামালের খোজখবর জানতে চাপ সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে তার পিতা ও পরিবারের লোকজনের কান্নাকাটি এবং নুরুল হক ভূইয়া নিজে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ছেড়ে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি নুরুল হক ভূঁইয়া ও মিছবাহ উদ্দিন ভূঁইয়াকে রাজাকারদের দালাল উল্লেখ করে তিনি বলেন-তারা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ অন্যান্য দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেননি। অথচ তারা মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হিসেবে কিভাবে দাবী করেন। ইদানিং পত্রিকার মাধ্যমে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু সফলতার কথা উল্লেখ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যারা মুক্তিযুদ্ধে যাননি যুদ্ধের কৃতিত্ব নিজেদের নামে চালিয়ে দেয়া স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং মিথ্যাচার আমরা এই মিথ্যাচার ও বিকৃতির প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, দাসপার্টির খোঁজে বইতে আমরা জেনেছি এবং ভিডিও ক্লিপ দেখেছি যেখানে মিছবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও নুরুল হক ভূঁইয়া বলছেন যে ধৃত রাজাকারদের দাসপার্টি হত্যা করেছিল এবং যুদ্ধাহত দাসপার্টির সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াসের কাছে তারা কৈফিয়ত চাচ্ছেন-কেন? রাজাকারদের হত্যা করা হয়েছে, রাজাকারদের নাকি হত্যা করার কথা ছিল না। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যুদ্ধকালীন কোন অপারেশনের জন্য মুক্তিযুদ্ধার সমালোচনা বা কৈফিয়ত চাওয়া স্পষ্টত ধৃষ্ঠতা এবং অপরাধ। এই ধৃষ্ঠতা দেখানোর অধিকার কারো নাই। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করেছেন ১ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত জাতীয় প্রয়োজনে সংগঠিত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে কোনা আইনী কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে সশস্ত্র অবস্থায় ধৃত রাজাকারদের শাস্তি দেয়ার মিছবাহ উদ্দীন ও নুরুল হক ভূঁইয়ার এতো আপত্তি কেন? জাতির শ্রেষ্ট সন্তান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধারকাছে কৈফিয়ত চাওয়া মানে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া।

মুক্তিযোদ্ধার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার ধৃষ্ঠতার জন্য তিনি দুই ভাইয়ের শাস্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। আইয়ুব খানের ছবি ভাংচুরের অপরাধে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূঁইয়া তাকে বেত্রাঘাত করে ও হুলিয়া জারী করায়। ৭০ এর নির্বাচনের পূর্বে তারা মুসলিমলীগ করত। ঐ নির্বাচনের সময় নুরুল হক ভূঁইয়া আওয়ামীলীগের বিপক্ষের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিক আহমদের পক্ষে আম মার্কায় এজেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারনায় লঞ্চযোগে আজমিরীগঞ্জ আসলে তাকে নুরুল হক ভূঁইয়া গংরা বাধা প্রদান করেন। বাধা প্রদানের ঘটনায় আজমিরীগঞ্জ অন্তর্গত শরীফপুর নৌকার মাঝি মৃত মরম আলীর পুত্র গোলাম নবী স্বাক্ষী ছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জেনারেল রব এর নির্বাচনী প্রচারনায়ও এরা বাধা প্রদান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সমেয় পাকিস্তান আর্মির চলাচলের সুবিধার জন্য তারা খোয়াই নদীর নৌকা দ্বারা সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছিলেন এবং তাদের মালিকানাধীন লঞ্চ শরনার্থীদের মালামাল লুটে ব্যবহৃত হয়েছে। মাকালকান্দি, জলসুখা (ঘোষহাটি) ও পুরানিয়া গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষন ও  গণহত্যার প্রধান ঘাতক, শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী রেজাকে যুদ্ধের পর এদের বাড়ি থেকে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আটক করেছি।

স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী এইসব কর্মকান্ড উল্লেখের জন্য দাসপার্টির খোঁজে বইয়ের লেখক কামরুল হাসান মুর্শেদ ও আমি যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা মোঃ ইলিয়াস মিয়ার বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করে হয়রানী করছেন মিছবাহ উদ্দিন ও নুরুল হক ভূঁইয়া।

মুক্তিয্দ্ধুকালীন ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এ মামলা দেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কাঠগড়ায় তোলার শামিল বলে আমি মনে করছি। দ্রুত এই হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে সারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে। তিনি আরো বলেন-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে আমরা যুদ্ধ করেছি এই দেশের স্বাধীনতার জন্য, আমাদের বহুসাথী যুদ্ধের মাঠে শহীদ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বাধানকারী দল আওয়ামীলীগ থেকে অবিলম্বে নুরুল হক ভূঁইয়া ও মিছবাহ উদ্দিন ভূঁইয়াকে বহিস্কারের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তৈয়বুর রহমান খান বাচ্চু।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত