সদরুল আমিন, ছাতক

২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ২০:৩০

ডেস্ক-বেঞ্চ নেই, মাটিতে বই রেখে পাঠদান

সুনামগঞ্জের ছাতকে নোয়ারাই ইউনিয়নের চরভাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে মাটিতে পাঠ্যবই রেখেই পাঠদান করছে দু’শতাধিক শিক্ষার্থী। বসার বেঞ্চ ও পাঠ্যবই রাখার ডেস্ক না থাকায় মাটিতে পাঠ্যবই রেখেই পাঠদান করছে তারা।

২০১৬ সালে চরভাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী হারিছ আলীর স্ত্রী পিয়ারা বেগম, প্রবাসী আবু সৈয়দের স্ত্রী সাজু বেগম ওরফে সাজনা ও মৃত নেহার উদ্দিনের পুত্র শাহিন আলমের দানকৃত ৩৩ শতক ভূমির উপর হারিছ আলীর অর্থায়নে মাটি ভরাটসহ একটি টিনশেড স্কুল নির্মাণ করে পাঠদান শুরু করা হয়। এরআগে চরভাড়া গ্রামে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার কোন সুযোগ ছিল না। দূরের কাড়ইলগাঁও, বারকাহন ও সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে চরভাড়া গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করেছে।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে ৩ জন ভূমি দাতা ও প্রবাসী হারিছ আলীর অর্থায়নে চরভাড়া গ্রামে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। এসময় বিনা বেতনে রোমিনা বেগমকে প্রধান শিক্ষিকা করে ৪ জন শিক্ষিকার মাধ্যমেই শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে পাঠদান শুরু হয়। প্রথম বছর ২০১৬ সালে প্রাথমিক সমাপনীতে ১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ ও ২০১৭ সালে ১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ সফলতা অর্জিত হয়।

এবার ৫ম শ্রেণিতে ৯ জনসহ বিদ্যালয়ে প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু স্কুলে স্যানিটেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। বিশুদ্ধ পানির জন্যে রয়েছে একটি টিউবওয়েল। ঘরের পার্টিশন না থাকায় পাশাপাশি স্থানেই চলছে সব ক্লাসের পাঠদান। এতে শিক্ষা কার্যক্রমের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

স্কুলের রাস্তায় মাটি ভরাট না থাকায় বর্ষা মৌসুমের ৬ মাসই এটি পানির নীচে থাকে। স্কুল ঘরের ভিটায় মাটি ভরাট থাকলেও স্কুল মাঠে এখনো ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা রোমিনা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এযাবৎ শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরও সফলতা অর্জন করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমির আলী বলেন, এক সময়ে তারা বর্ষায় সাঁতার কেটে দূরবর্তী স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করতেন। এখানে স্কুল হওয়ায় গ্রামের ধনী-গরিব সব ছাত্র-ছাত্রী সহজেই লেখাপড়া করতে পারছে। তিনি স্কুলটিকে সরকারীকরণের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

দু’বছর থেকে স্কুলে শতভাগ রেজাল্ট করেছে জানিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানিকচন্দ্র দাস বলেন, স্কুলটি এখনো লিস্টে উঠেনি। তবে বিদ্যালয়বিহীন এলাকা হিসেবে এটিকে সরকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত