নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ১৭:৩২

‘দক্ষিণ সুরমাকে উন্নয়নবঞ্চিত করছেন সাংসদ’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতার

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলাকে অন্যায়ভাবে উন্নয়ন বঞ্চিত করছেন সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ আলী।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমন উপলক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় মাহমুদ উস সামাদ নিজেকে প্রধান অতিথি উল্লেখ করে বর্ধিত সভার মঞ্চে জোরপূর্বক ব্যানার টানিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর এমপির ভাড়াটে গুণ্ডারা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ ২য় টার্মে নির্বাচিত হয়ে বিগত ৪ বছরে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী কোন ভূমিকা রাখতে পারেন নি উল্লেখ করে রইছ আলী বলেন, "উপজেলার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই করুণ। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সংকট বিরাজ করছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। দক্ষিণ সুরমার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের ফলেই এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।"

২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ন্যক্কারজনক ভূমিকা রাখেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, "এমপি নিজের লোকদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে এমপির প্রকাশ্যে বিরোধিতার কারণে ৭ ইউনিয়নের ৫টিতে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়।"

উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের নবারুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে সাংসদ মাহমুদ উস সামাদের অশোভন আচরণ ও শিক্ষককে প্রকাশ্যে চপেটাঘাতের এমন অভিযোগ তুলে ধরেন রইছ আলী। সম্প্রতি একটি পথসভায় দলীয় একজন নেতাকে এমপির কান ধরে উঠবস করানোর প্রসঙ্গ টেনে এটিকে অত্যন্ত অপমানজনক বলে উল্লেখ করে দলীয় নেতাদের প্রকাশ্যে সাংসদের অব্যাহত অপমানের অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পক্ষে সাংসদের সাফাই গাওয়ার অভিযোগ তুলে সাংসদ মাহমুদ উস সামাদের এক সভার বক্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে বলা হয়, "এম ইলিয়াস আলীর মতো জাঁদরেল এমপিই আমাদের প্রয়োজন।"

সাংসদ মাহমুদ উস সামাদের ফেঞ্চুগঞ্জের আরেকটি জনসভার উদ্ধৃতি টেনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সেখানে মাহমুদ উস সামাদ বলেন, 'নবনির্মিত শাহজালাল (রহঃ) সার কারখানা আমি পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেবো। আমি যেমন গড়তে জানি তেমন ধ্বংস করতে পারি।' "যা উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের বিস্মিত করেছে। কত বড় 'কুলাঙ্গার' হলে নিজ দেশে এতো বড় একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের কথা মুখে আনতে পারেন" উল্লেখ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রশ্ন রাখেন রইছ আলী।

তাছাড়া এই সারকারখানায় দক্ষিণ সুরমার লোকজন ছাড়াও সিলেট ও সিলেটের বাইরের লোকজন কর্মরত আছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

বিগত চৌদ্দ বছর ধরে উপজেলা সম্মেলন নিয়ে এমপির টালবাহানায় সম্মেলন পিছিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রইছ আলী। "একজন ব্যর্থ ব্যক্তিকে আমরা জনপ্রতিনিধি হিসাবে দেখতে চাই না" উল্লেখ করে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তিকে আগামীতে মনোনয়ন প্রদানের জন্য সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয়। ইতিমধ্যে 'কোন পাকিস্তানি দালাল, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সন্তানদের নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না' দলীয় সভানেত্রীর এই বক্তব্যের বাস্তবায়ন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল আলমের অনুপস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইছ আলী বলেন, "তার অনুপস্থিতিতে সহ সভাপতি নিয়ে কাজ করছি। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।"

সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পিতা দেলোয়ার হোসেন ফিরু মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং চিহ্নিত রাজাকার নয়- উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রইছ আলীর কিছুদিন পূর্বে দেওয়া এমন বক্তব্যের পর আজ কেন লিখিত বক্তব্যে চিহ্নিত রাজাকার এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান বলা হচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান রইছ আলী।

আগামীতে সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে কাকে পছন্দ- এমন প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

গত ২৭ জানুয়ারি চন্ডিপুলে উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফলের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ বরাবরে লিখিত অভিযোগ না দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দলকে সুন্দর করার স্বার্থে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বলে জানানো হয়।

এমপি মাহমুদ উস সামাদকে আবারো দলীয় মনোনয়ন দিলে তার সাথে থাকবেন কি না এমন প্রশ্নে তা সময়ই বলে দেবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুস সালাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শায়েদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মতিন, বন ও পরিবেশ সম্পাদক বশির আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আকবর আলী, তপন চন্দ্র পাল, এম এ রব, মোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম শায়েস্তা, বোরহান উদ্দিন, মতিউর রহমান, জালাল উদ্দিন, আতাউর রহমান, মনোয়ার হোসেন মনু, লোকমান আহমেদ ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সানি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত